চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প পাহাড়তলীতে

মানবতার সেবায় ১০ যুবক

ইমাম হোসাইন রাজু

১৬ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৯ অপরাহ্ণ

এমনিতেই নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতাল। বিকেলের পর থেকে কিছু কিছু চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বার করলেও তা ছিল অপ্রতুল। তারমধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর রোগী দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন এসব চিকিৎসক। যার কারণে করোনার এ দুর্যোগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে পুরোটাই দিশেহারা হয়ে পড়েন নগরীর পাহাড়তলী এলাকার সাধারণ মানুষ।

তিন লাখ মানুষের বসবাসের এ অঞ্চলের এই যখন অবস্থা, তখন কিছুটা স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় কিছু যুবক। যারা অস্থায়ী ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এখানকার সাধারণ মানুষদের। ইতোমধ্যে গত কয়েক দিনেই পাঁচ শতাধিক সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতেও সক্ষম হয়েছেন তারা।

শুধু চিকিৎসা সেবাই নয়, অস্থায়ী ক্যাম্পের মাধ্যমে সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসকের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসাপত্রের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রীও। একই সাথে এ অঞ্চলের কোভিড-নন কোভিড রোগীদের প্রয়োজনে বাসায় গিয়েও সরবরাহ করছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই করছেন দশ যুবক। যার ফলে বৃহত্তর পাহাড়তলী অঞ্চলের মানুষদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়তলীর ভেলুয়ার দিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাধারণ রোগীদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। যেখানে একজন চিকিৎসক ও উদ্যোক্তারা নিজেরাই একে একে সেবা নিতে আসা রোগীদের স্বেচ্ছায় সেবা দিতে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। রোগীরাও বিনামূল্যে এমন সেবা পেয়ে ছিল সন্তুষ্ট।

কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীর সাথে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলাম। কিন্তু অর্থ ও হাসপাতালের অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছি না। এখানে আসার আগে ভাবছি হয়তো, তেমন কিছুই পাওয়া যাবে না। তবে এসে পুরো ধারণাই বদলে গেছে। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিক।’
উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ জুলাই অস্থায়ী এ ক্যাম্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে প্রতি রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রথমদিকে নিজের অর্থ দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করলেও, পরবর্তীতে এগিয়ে এসছেন ওই অঞ্চলের ব্যবসায়ী, সমাজসেবীসহ অনেকেই। আপাতত তিন মাস এ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তা অব্যাহত থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন তারা।

উদ্যোক্তাদের একজন ইব্রাহিম রিফাত পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এ অঞ্চলের মানুষরা চিকিৎসা সেবা পেতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতাল থাকলেও এ অঞ্চলে তা নেই। সম্প্রতি বন্দর-ইপিজেড কেন্দ্রীক যুবকদের উদ্যোগে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর, এ অঞ্চলেও এমন একটি হাসপাতাল চাই বলে ফেসবুকে পোস্ট করি। পরে বন্ধুবান্ধবদের দশজনের উদ্যোগে এমন একটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয় এবং তা বাস্তবায়নও করা হয়। প্রতিটি মানুষ যেন তার মৌলিক অধিকার প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাটুকু পায়, এমন চিন্তা নিয়ে আমাদের এ উদ্যোগ।’ উদোক্তাদের অন্যরা হলেন তাজুল ইসলাম, এমরান হোসেন, শেখ মো. নাজমুল, হাবিবুর রহমান রবি, আলী ফরহাদ মাসুদ, এনামুল হক আজিম, সিরাজুল আলম অভি, রুবেল আহাম্মেদ, হান্নান খান ফয়সল। তাঁদের অনেকেই শিক্ষার্থী আবার কেউ কেউ শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরি কিংবা ব্যবসায়ের কাজে মনোনিবেশ করেছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট