চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাভাইরাস : বেশি ঝুঁকি নিম্নমানের সুরক্ষা সরঞ্জামে

ইমাম হোসাইন রাজু

২৮ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:১২ অপরাহ্ণ

চল্লিশর্ধো নুরুল হক। নগরীর সিনেমাপ্যালস এলাকার সড়কে বিক্রি করছিলেন করোনারভাইরাস থেকে বাঁচার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী। যেখানে বাদ নেই পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট বা পিপিই। রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের মাস্ক, গ্লাভস ও চক্ষু রক্ষার গগলসসহ হ্যান্ড সেনিটাইজার ও হ্যাক্সিসলও। শুধু নুরুল হকই নয়, ওই এলাকায় প্রায় বিশটিরও অধিক ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে সুরক্ষার এসব সরঞ্জামের। আর দোকানগুলোর সামনেই ঝড়ো হচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই দেখে চলে গেলেও বেশিরভাগই কিনছেন নিজেদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতে এসব সরঞ্জাম। কিন্তু সুরক্ষার এসব সরঞ্জাম কতটা সুরক্ষা দেবে জানেন না অনেকেই। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব পিপিই বা সুরক্ষাসামগ্রীর অধিকাংশই নিম্নমানের। যা করোনা থেকে রক্ষা না করে বরং এর ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে। বরং সাধারণের জন্য এসব নিম্মমানের পিপিই ব্যবহারের প্রয়োজন নেই বলে জানান চিকিৎসকরা।

শুধু সিনেমাপ্যালস নয়, নিউমার্কেট, জিইসি, হাজারি গলি, লালদিঘি, বহদ্দারহাট, চকবাজার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা, দুই নম্বর গেটসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকার ফুটপাথেই মিলছে এমন সস্তা ও নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী। ফুটপাত ছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে অধিকাংশ মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে মুদি দোকানেও। বিক্রিতে থেমে নেই অনলাইনেও। অনেকেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেসবুকে গ্রুপ কিংবা পেজ খুলে দেদারসে বিক্রি করছেন এসব সরঞ্জাম। যার কারণে সাধারণ মানুষ করোনার ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে জেনে, না জেনেই কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই মোটেও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিবে না। বরং তা ব্যবহারের কারণে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে পিপিইর ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। মূলত চিকিৎসকরা স্পর্শকাতর রোগীর চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের সময় এটি ব্যবহার করতেন। এরবাইরে জীবাণু ছড়ায় এমন গবেষণায় তা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর তার পরিচিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবহারেরও। সকলেই এসব পিপিই পড়ে মনে করেন, তিনি নিরাপদ। আসলে তা ভুল ধারণা। এসব পড়লে আরও ঝুঁকিতে থাকতে হবে তাকে।’

এদিকে পিপিই ছাড়াও বাজারে ছড়িয়ে পড়া নিম্মমানের মাস্ক থেকেও করোনার ভাইরাস ছড়াতে পারে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বাজারে সেকল পিপিই বা মাস্ক পাওয়া যায় তার সবগুলোই শপিং ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি করা। যা দিয়ে কখনোই ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব নয়। চোখের সুরক্ষার জন্য যে বিশেষ চশমা (গগলস) বলা হয়ে থাকে, তা অর্জিনাল গগলস নয়। বরং শিশুদের খেলনা। যেসকল হ্যান্ড গ্লাব বিক্রি করা হচ্ছে, তা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। এসবের মধ্যে একবার ভাইরাসের উপস্থিত পাওয়া গেলে, তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা ব্যবহারের ফলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ এমরান এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভ্যানে কিংবা ফুটপাতে পাওয়া যাওয়া অধিকাংশ সুরক্ষাসামগ্রীই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিংবা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। যা ভাইরাস ঠেকাতে মোটেও কার্যকর নয়। বরং এতে আরও করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।’

‘পিপিই তেরির একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড আছে। তা না মেনে তৈরি করা হলে সেগুলোতে ঝুঁকি এড়ানো যাবে না। গুণগত মান নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই সেগুলো বাজারজাত করা ঠিক নয়। তবে ভ্যানে বা ফুটপাতের সকলস্থানে অভিযান চালানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোন ফার্মেসিতে যদি এসব নিম্মমানের সরঞ্জাম বিক্রি করা হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এসব পিপিই সাধারণ মানুষের ব্যবহারের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির পূর্বকোণকে বলেন, ‘মূলত করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরাই এসব পিপিই ব্যবহার করতে হবে। জনসাধারণের জন্য এসব ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেসব পিপিই রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হচ্ছে কিংবা সাধারণ মানুষ যা পরে ঘুরছেন, সেগুলো শুধু জামা আর প্যান্টের কাভার অল। এর বাইরে আর কিছুই নেই।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট