চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

যেভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা সুস্থভাবে রোজা রাখবেন

শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া

২৬ এপ্রিল, ২০২০ | ৯:২৫ অপরাহ্ণ

ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াব বা রোজা অন্যতম। তাই রমজান মাসে সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারাটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। করোনাভাইরাস মহামারির এই পরিস্থিতিতে রোজা রাখতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রেখে। ডায়াবেটিস রোগীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও, গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা মানলে তারাও রোজা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবেন।

প্রথমেই জেনে নিতে হবে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থা উপযুক্ত কিনা। কী ধরনের খাবার, কখন, কীভাবে ও কতটা খেতে হবে। জানতে হবে শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়ামের নিয়ম, ওষুধের সময় ও মাত্রা, পরিমাণ ও রক্ত পরীক্ষার সময়গুলো। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের তিনটি মূল বিষয় হলো- থ্রি ডি অর্থাৎ ডায়েট, ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা) ও ড্রাগ (ওষুধ)।

ডায়েট

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা মেনে চললে স্বাভাবিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিদের মতোই রোজা রাখা সম্ভব। ধর্মীয় আচার অনুযায়ী রোজায় আমরা সাধারণত রাতে খাই, তাই খাদ্য তালিকা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হাইপো/হাইপারপ্লাসিয়া না হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।

ইফতারের খাবার

ইফতারের খাবারের পরিমাণ হতে হবে অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ অর্থাৎ সারা দিনের মোট খাবারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। পানি শূন্যতা আর শরীরের পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে শরবত, ডাবের পানি, ফলের জুস, লেবুর শরবত, ইসবগুলের ভুষি (চিনি, গুড়, মধু এবং মিষ্টি ছাড়া) ইত্যাদি খাওয়া যাবে। ইফতারির খাবারগুলো নিজস্ব পছন্দমতো হতে পারে যেমন- ছোলা, চটপটি, হালিম, কাবাব, টিকিয়া, পিঁয়াজু, পাস্তা, নুডলস ইত্যাদি। কিন্তু তা হতে হবে অবশ্যই পরিমাণমতো। তবে বাদ দিতে হবে মিষ্টি জাতীয় খাবার।

সন্ধ্যা-রাতের খাবার

এ বেলার খাবারের পরিমাণ হবে অন্যান্য সময়ের সকালের নাশতার পরিমানের সমান অর্থাৎ সবচেয়ে কম। যা সারা দিনের মোট খাবারের ১০-২০ শতাংশ। আর এই বেলায় খাবারের তালিকায় রাখতে হবে সুষম খাবার। যেমন- ভাত, রুটি, খিচুড়ি। সঙ্গে রাখা যেতে পারে মাছ, মাংস, সবজি, শাক, ডাল এবং দুধ।

সেহরি

সেহরির খাবারের পরিমাণ হবে অন্যান্য সময়ের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি। যা মোট খাবারের ৪০-৪৫ শতাংশ। এ খাবারের সময় হতে হবে সাহরির শেষ সময়ে। যাতে দিনের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি না হয়। অনেকেই এ বেলায় দুধ-ভাত, কলা বা অন্য ফল মিলিয়ে খেতে চান। তবে মনে রাখতে হবে, এই ৩টি খাবার একসঙ্গে খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। তাই এর মধ্য থেকে যে কোনো দুটি খাবার গ্রহণ করাই ভালো।

ওষুধ

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের পাশাপাশি ওষুধ/ইনসুলিনের ডোজ ও সময় সঠিকভাবে চিকিৎসকের কাছ থেকে রোজার আগে জেনে নিতে হবে।

শৃঙ্খলা

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রেখে তারাবিহর নামাজ পড়লে আলাদা করে ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয় না। সারা দিন রোজা রেখে বিকালে বিশ্রাম নিতে হবে। যাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ করা যায়। আর রোজা রেখে ইনসুলিন নেয়া এবং রক্ত পরীক্ষা করা যাবে। ওই রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে রোজা ভাঙতে হবে যদি- হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মিলিমোল/লি এর কম হয়, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, রক্তের গ্লুকোজ ১৬.৭ মিলিমোল/লি এর বেশি হলে এবং অন্যান্য যে কোনো অসুস্থতায়।

বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে সন্ধ্যারাত ও সাহরিতে কখনোই না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। আর ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত খাবারগুলোই খেতে হবে। বাদ দিতে হবে সব ধরনের ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রসেস ফুড, চিনি, মিষ্টি, গুড়, মধু ও অস্বাস্থ্যকর সব খাবার। ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্য কোনো রোগ (কিডনির রোগ, গাউট, ইউরিক অ্যাসিড) বেশি থাকে তবে রোগের ধরন অনুযায়ী খাবারের ধরন এবং পরিমাণ নির্বাচন করতে হবে। যা অবশ্যই ব্যক্তিভিত্তিক পরিবর্তনযোগ্য।

 

 

 

লেখক : প্রধান পুষ্টিবিদ, বারডেম হাসপাতাল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট