বিশ্বজুড়ে মানবঘাতক করোনা দিনদিন বাড়ছে। অদৃশ্য এ জীবনসংহারক ভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের জন্য আশ্রয় নিচ্ছে মানুষের শরীর। সংস্পর্শের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুততম গতিতে। বিমানযাত্রীর শরীরে ভর করে উড়ে উড়ে যাচ্ছে একদেশ থেকে আরেক দেশে। বাসে, ট্রেনে , জাহাজ-লঞ্চে নৌকায় চড়ে ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। সচেতন মানবগোষ্ঠী অসহায়ভাবে দেখছে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। ভয় পাচ্ছে , আতংকিত হচ্ছে, অতি উদ্বেগেও দিশেহারা হচ্ছে। চেষ্টা করছে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রচারিত নিয়ম-নীতির বিষয়ে সজাগ হচ্ছে। কেউ বা আমলেই নিচ্ছে না গুরুতর বিষয়টি। অতি আতংক যেমন ক্ষতিকর, একদম অসচেতনতাও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে, সন্দেহ নেই। আক্রান্ত হওয়ার ভয়, মৃত্যু ভয়, থাকা-খাওয়ার অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে ভয় আর ভয়, ভয়াবহ চাপে ভুগছে মানুষ। অতি চাপে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে করুণ পরিণতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে ।
আসুন, সরকার ঘোষিত সাময়িক ব্যবস্থা মেনে নেই। নিজেকে, স্বজনদের ঝুঁকি কমাতে সামাজিক দায়িত্ব পালন করি। এখন বলা হচ্ছে বাতাসেও রোগটি ছড়ায় । মাস্ক পরা, হাত ধোঁয়া ও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির দূরত্ব বজায় রাখা শ্রেয়, জরুরি।
এখন ঘরে থাকা জরুরি
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের তালিকা তৈরি করা উচিত। ঘরে বসেও বাইরের কাজ করা যায়। তা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ প্রটেকশন নিয়ে বের হওয়া উচিত ।
অতিথি আগমনও নিরুৎসাহিত করা উচিত। তারপরও কেউ চলে এলে বাড়িতে ঢোকার আগেই হাত ধুয়ে তাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া যাবে। তাকে স্পর্শ করা ঠিক হবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা শ্রেয়।
আমার রোগীদের জন্য :
জরুরি হলে কল করতে পারেন। হাসপাতাল/চেম্বারে আসা যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কল করার সময় ব্যবস্থাপত্র হাতে রাখুন। সেখানে নিচে জরুরি নম্বর দেওয়া আছে। সংক্ষেপে মূল সমস্যার কথা জানান বা এসএমএস করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ঘাবড়ানো চলবে না। তবে সচেতন থাকতে হবে। ঘুম বাদে সবসময় পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ । মহান আল্লাহ সহায়।
সব কিছুর জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকা চলবে না। এ বিপদের সময় কারও দোষ ধরাও উচিত হবে না। আসুন, সবাই মিলে সতর্ক থাকি, অদৃশ্য শত্রুকে মোকাবিলা করি সাহসের সঙ্গে ।
চিকিৎসকরা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। চিকিৎসাব্যবস্থা ধরে রাখতে হলে চিকিৎসকদের সুরক্ষা জরুরি । অবশেষে আদালতের রায় এসেছে । সমস্যায় ডুবে থাকব না। জয়ী হতেই হবে আমদের।
যারা কোয়ারান্টাইনে আছেন বা যাদের আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তারা আসামি না। তাদের প্রতি সহমর্মিত দেখাতে হবে। তবে তাদের অসতর্কতার জন্য দেশে বিপদ হানা দিচ্ছে, সেটা সবার জানা উচিত । আর কেউ যেন অসচেতন হয়ে নিজেকে, পরিবার এবং সমাজকে আক্রান্ত করতে না পারে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচার চালানোর সময় যেন হাত ছাড়া হয়ে না যায়, প্রায়োরিটি দিতে হবে। সরকারকে তো অবশ্যই। নিজেকেও।
“ভাইরাস বা সংক্রমণ রোগ বলে কিছু আছে, মানি না ” বলে গ্রামে-গঞ্জে যারা প্রচার করছেন আবেগ তাড়িত হয়ে, তাদেরকেও বাস্তবতার আলোয় আলোকিত করতে হবে, রুখতে হবে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টির নজরদারি করবেন, আহবান জানাচ্ছি। জয়ী আমরা হবই ইনশাআল্লাহ ।
অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, কথাসাহিত্যিক ও মনোশিক্ষাবিদ
পূর্বকোণ/পিআর