চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি: ক্রমাগত লোকসানে এখন ‘লাইফ সাপোর্টে’

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি: ক্রমাগত লোকসানে এখন ‘লাইফ সাপোর্টে’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৪:৪০ অপরাহ্ণ

লোকসানের ঘানি টানতে টানতে এখন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরির। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে গ্লাস বিক্রি, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আর উৎপাদিত গ্লাস অবিক্রীত পড়ে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

এখন ‘লাইফ সাপোটের্’ রয়েছে দেশের গ্লাস তৈরির সর্বপ্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলের মতো ভাগ্যবরণে আশঙ্কা করছেন এখানকার শ্রমিকেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, নানা কারণে ৬ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কারখানার মেশিনগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। প্রায়শই মেরামত করে চালু রাখতে হয়। এছাড়াও উৎপাদিত গ্লাস উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান দিতে দিতে এখন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ভবিষ্যত নির্ভর করছে সরকারের হাতে।

একাধিক শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ৫ মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। অনেকেই ইতিমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন।

উসমানিয়া গ্লাস শিট দেশের গ্লাস তৈরির সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই লাভজনক ছিল। ‘৯০ এর দশকের পর থেকে নানা কারণে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। অব্যাহত লোকসানের কারণে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হন।

একাধিক শ্রমিক জানান, দেশে গ্লাস শিটের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা, বহুতল ভবন- বিপণি বিতান, গৃহ-অফিস সজ্জায় ব্যাপকভাবে গ্লাসের কদর বাড়ছে। সরকারি ছাড়াও বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠছে নতুন নতুন গ্লাসশিল্প কারখানা। অথচ বেশ লাভে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। বাড়ছে পরিধিও। কিন্তু লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অত্যাধুনিক মেশিন বসানো হয়। আধুনিক মেশিনগুলোতে খরচ কম, উৎপাদন বেশি। তাই লাভে থাকে। উসমানিয়া গ্লাস শিটের মেশিনগুলো লক্কর-ঝক্কর হয়ে পড়েছে। এতে বাজার চাহিদা মতো গ্লাস তৈরি করা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে পণ্যের বাজার কমতে থাকে। উৎপাদনের চেয়ে খরচ বেশি পড়ে। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে।

জানা যায়, লোকসানের কারণে দেড় বছর আগে একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় অনেক শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়। গত ২৩ জুন অগ্নিকা-ে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। উসমানিয়া গ্লাস শিটে তিন শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ছিলেন। এরমধ্যে শতাধিক শ্রমিক অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করতেন। কারখানা বন্ধ থাকায় অস্থায়ী শ্রমিকেরা এখন দিশাহারা।

জানা যায়, কারখানার গুদামে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট গ্লাস শিট। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গ্লাস শিট উৎপাদনে খরচ হয় চার কোটি ৭১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। গ্লাস বিক্রি করে আয় হয় দুই কোটি ৫৪ লাখ আট হাজার টাকা। প্রায় অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লোকসান হয় ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রতি বছর এভাবে লোকসান গুনে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি সিবিএ’র সভাপতি শেখ তাজ উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগুন লাগার পর থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অনেক শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। অস্থায়ী শ্রমিকেরা অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘গ্লাস উৎপাদনের তিনটি মেশিনই পাকিস্তান আমলের। পুরোনো মেশিনে উৎপাদন কমে এসেছে। উন্নত প্রযুক্তির মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে কারখানা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আশা করছি, সরকার নতুন রূপে আধুনিকমানের মেশিন স্থাপন করে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিবে’।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট