চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রবি আসার খবরে শেয়ার বাজারে ফিরছেন অনেকে

ইফতেখারুল ইসলাম

১৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

পুঁজি বাজারের প্রতি আস্থাহীনতা, আইপিও শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়ম বেঁধে দেয়া এবং করোনার কারণে শেয়ার বাজার থেকে সরে গেছেন অনেকেই। তবে সামনে রবি আসছে, এই খবরে অনেকেই নতুন করে বিও একাউন্ট খুলছেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত বিও একাউন্ট ছিল ১০০৮৮টি। ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর একাউন্ট আছে ৯২৬২ টি। এই সময়ে একাউন্ট কমেছে ৮২৬টি। অপরদিকে, বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের শুরু থেকে বিও একাউন্ট হয়েছে ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৬ টি। বর্তমানে সচল একাউন্ট আছে ২৩ লাখ ১০ হাজার চারটি। অর্থাৎ ৪৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২২টি একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে যেসব একাউন্ট সচল আছে তার মধ্যে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৪৫০টি কখনোই ব্যবহার হয়নি। কোন শেয়ার নেই এমন একাউন্টের সংখ্যা ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৭টি। শেয়ার আছে এমন একাউন্টের সংখ্যা ১২ লাখ ১০ হাজার ১১৭টি।
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মেজর অব. এমদাদ পূর্বকোণকে বলেন, করোনার কয়েকমাস আগে থেকেই পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। যে আশা নিয়ে মানুষ বিনিয়োগ করেছে, সেই রিটার্ন আসেনি। বরং মূলধন হারিয়েছে। একারণে তারা আশাহত হয়েছে। এই খাতে ব্যবসা করতে হলে অনেক বিষয় জানতে হয়। যা আমাদের দেশের মানুষ জানে না। ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নামে একটি কোর্স ঢাকায় একটি ইনস্টিটিউট খুলে চালু করা হয়েছে। একটি কোম্পানির শেয়ার কিনতে গেলে ব্যালান্স সিট দেখে বুঝতে হবে কোম্পানির অবস্থা। আরনিং পার শেয়ার বুঝতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কোন শেয়ারের দাম দফায় দফায় বেড়ে যাচ্ছে। অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়া দামের শেয়ার যখন যৌক্তিক মনে করে কেনা হয়, তা এক সময় না একসময় ওই ক্রেতা বিপদে পড়েন। লোকসানের শিকার হন। বেশির ভাগ শেয়ার বাবল সিনড্রম বুঝে না। কিন্তু আমাদের দেশে তা ঘনঘন দেখা দেয়। তখন বিনিয়োগকারিরা মার খায়। যখন কয়েকজন মার খায় তখন বাকিদের মাঝে ধারণা সৃষ্টি হয় এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান হবে। দুইটি কারণ আছে। একটি হল অবিবেচনাপ্রসূত শেয়ার কেনা। অপরটি হল রেগুলটরি অথরিটি ভাল শেয়ারের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে আনতে না পারা। ভাল শেয়ার বাজারে থাকলে মানুষ খারাপ শেয়ার কিনত না। ভাল শেয়ার কিনলে এটা নিশ্চিত কেউ পথে বসবে না।
আরেকটি কারণ হল করোনার আগে এমনিতেই লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা আর ব্যবসা করতে চাইছে না। কারণ করোনাকালে তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। শেয়ার বাজারে যে টাকা ছিল তা তুলে নিয়ে দৈনন্দিন পারাবারিক খরচ মেটাচ্ছে। এসব কারণে অনেক বিও একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এফসিএমএ পূর্বকোণকে বলেন, বিও একাউন্ট কমার তথ্যটি সঠিক। তার আইল্যান্ড সিকিউরিটিজেও ১৫ শতাংশ একাউন্ট রিনিউ করেনি বিনিয়োগকারিরা। তবে এটা করোনার কারণে নয়। যারা একাউন্ট রিনিউ করেনি তারা আসলে বিনিয়োগকারী নন। তারা শুধু আইপিও পাওয়ার আশায় একেকজন একাধিক একাউন্ট খুলতেন। এখন রিনিউ কম হওয়ার কারণ হল, আইপিও দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কর্তপক্ষ কিছু নিয়ম করে দিয়েছে। একসময় ১০ টাকার একটা শেয়ারের দাম প্রথম দিনে ৫০ টাকাও বেড়ে যেত। পরের দিন ১০০ টাকাও বেড়ে যেত। এখন আইপিও’র দাম প্রথমদিন সেভাবে বাড়তে পারে না। এখন প্রথম দিন ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। দ্বিতীয় দিন ১০ শতাংশ বাড়া বা কমতে পারবে। এই অবস্থা দেখে যারা শুধু আইপিও এর জন্য একাউন্ট খুলতেন তারা এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে সামনে পুঁজিবাজারে রবি আসছে, একারণে অনেকেই নতুন করে বিও একাউন্ট খুলছেন। বাজারে অনেক সময় বলা হয়, ২৫ লাখ, ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী আছে। বাজারে বিনিয়োগকারির পরিসংখ্যান নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। যাদের বিও একাউন্টে কোন শেয়ারই নেই তাদের বিনিয়োগকারি বলার সুযোগ নেই। আবার যারা স্পন্সর তাদের শেয়ার তো বাজারে আসবে না। তারা বিনিয়োগকারি হলেও তাদের বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রিত। আবার যেসব একাউন্টে শেয়ার আছে তাদের সবাইকেও বিনিয়োগকারি বলা যাবে না। কারণ অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী ব্যবসা করছে স্ত্রীর নামেও একাউন্ট খুলেছেন। স্ত্রী শেয়ার বাজার সম্পর্কে হয়তো কিছুই জানেন না।
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জে বিও একাউন্ট কম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার আইল্যান্ড সিকিউরিটিজে প্রায় ৩৫ হাজার বিনিয়োগকারি আছেন তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম উভয় বাজারে ব্যবসা করতে পারছেন। তাদের চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জে আলাদা একাউন্ট না খুললেও চলে। আবার অনেকেই আলাদা একাউন্ট খুলেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট