চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে নারীরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:২৪ অপরাহ্ণ

অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে যাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে নারীর পথচলা আরও সুগম করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ঘর-সংসার-সন্তান সব সামলে অনেক নারী এখন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের ডাটা অন করলেই চোখে পড়ে নারীদের নানারকম ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন। নারী-পুরুষের পোশাক নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ফ্যাশন হাউজ, জুয়েলারি হাউস, হ্যান্ডিক্রাফট, জুতা, ঘর সাজানোর বিভিন্ন জিনিস, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, পার্লার, খাবারসহ প্রায় সব পণ্য নিয়ে কাজ করছেন নারী উদ্যোক্তারা। এসব ব্যবসাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই করছেন। আর স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক নারী। অনলাইনে ব্যবসা করছেন কথা হয় এমন কিছু নতুন ও পুরাতন নারী উদ্যোক্তার সাথে। যারা ঘর-সংসার সামলিয়ে ও পড়ালেখার পাশাপাশি ঘরে বসেই অনলাইনে ব্যবসা করছেন। তাদের মধ্যে কামরুন নাহার রিপা, হালিমা আক্তার, আফরোজা তানজিন, নওশিন, তাবাচ্ছুম ফারিহা, কলি ইসলাম, শান্তা চৌধুরী, নাদিয়া ইসলাম, তমা পাল, ও মারজাহান উল্লেখ্যযোগ্য। এ নারী উদ্যোক্তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন অনলাইনের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এর একটা তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেড়েছে প্রায় ৭০ ভাগ। এক্ষেত্রে এখনো পুরুষদের চেয়ে প্রায় ৩০ ভাগ এগিয়ে আছে নারীরা। বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার ফেসবুক পেজের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার পেজ চালান নারী উদ্যোক্তারা। যা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো দিক।
কথা হয় অনলাইনের মাধ্যমে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ করা নারী উদ্যোক্তা কামরুন নাহার রিফার সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে অনলাইনে রিফা’স কালেকশন নামে আমার একটা গ্রুপ আছে। যেটি এখন মেয়েদের কাছে বেশ পরিচিত। এই জায়গাটিতে আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রমও করতে হয়েছিল। মূলত আমি একজন গৃহিণী। বিয়ের পর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সংসার আর সন্তানদের সামলাতে গিয়ে চাকরি করার সুযোগ হয়ে উঠেনি আমার। আবার আমার স্বামীও সন্তানদের রেখে চাকরি করি এটি পছন্দ করে না। এতো পড়ালেখা করে ঘরে বসে থাকতে নিজেরই খারাপ লাগছে। তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবি। এই ভাবনা থেকেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কিছু করার চেষ্টা করি। নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে শুরু করি। আমি মেয়েদের এক্সক্লুসিভ ব্লক, বাটিক, স্টোন পাথর ও প্রিন্টের থ্রি-পিস নিয়ে কাজ করছি। ব্যবসা নিয়ে আরো এগিয়ে যেতে চাই। চাই নিজের একটি প্রোডাক্ট তৈরি করতে। বর্তমানে সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। অনেকগুলো প্রশিক্ষণও নিচ্ছি।
কথা হয় নারী উদ্যোক্তা হালিমা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে কাজ শুরু করি। খুব ছোট পরিসরে। তখন থেকেই নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাতাম। দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে অনলাইনে নিজের একটা জায়গা তৈরি করেছি। এখন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষের কাছে আমি বেশ পরিচিত। আমি বেবি কাঁথাসহ নানান রকম নকশি কাঁথা, মেয়েদের কসমেটিক্স ও থ্রি পিস নিয়ে কাজ করছি। অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি আমি শিক্ষকতা পেশায়ও আছি। এ ব্যবসা নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
নাদিয়া ইসলাম নামের এক নতুন উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ছোট থেকেই চাইতাম নিজেই কিছু করি। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছি না। পরে অনেক ভেবে চিন্তে এক বছর আগে অল্প পুঁজি নিয়ে অনলাইনে হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যবসা শুরু করি। দেশি এবং হাতে তৈরি এসব পণ্য নিয়ে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই। আফরোজা তানজিন, নওশিন, তাবাচ্ছুম ফারিহা, কলি ইসলাম, শান্তা চৌধুরী তারাও একই কথা বলেন। কলি ইসলামের একটি ঘরোয়া পার্লার রয়েছে। তিনিও অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে কাজ করেন। শুধু তারাই নন, তাদের মত অনেক নারীই বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত থেকে নারীরা ঘরে বসেই যেমন উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও ঘরে বসে তাদের পণ্যটি বুঝে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রিন্সিপাল আশরিফা তানজিন বলেন, আমাদের দেশে অনেক নারী আছেন যারা ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করতে পারেন না। কিন্তু তারা স্বাবলম্বী হতে চান। সেদিক থেকে নারীরা বিভিন্ন রকম হাতের কাজ শিখে অনলাইন ব্যবসা করতে পারেন। বর্তমানে অনেক নারী ই-কর্মাসের মাধ্যমে ঘরে বসে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। যা খুবই ভালো দিক। ই-কর্মাসের সুবিধা হলো অল্প পুঁজিতে এমনকি বিনা পুঁজিতেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াই ব্যবসা করা যায়। তাই বর্তমানে মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে ই-কমার্স।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট