চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় অনলাইনে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:২৩ অপরাহ্ণ

অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকছেন নারী উদ্যেক্তাগণ। প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। আধুনিকতার ছৌঁয়ায় প্রযুক্তির এ যুগে নারীরাও অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। আর এতে বদলে গেছে নারীদের জীবন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক নারী উদ্যোক্তা। কারণ ঘরে বসেই নারীরা আয় করছেন হাজার হাজার টাকা। প্রতিটি নাগরিকের জীবনে প্রভাব ফেলেছে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যারা একটু ভালো রান্না করতে পারে তারাও ঘরে বসে অনলাইনে আয় করছে।
সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে রান্না বিষয়ক নারীদের কিছু পেজ ও গ্রুপে নানারকম খাবারের ছবি ও অর্ডাব নেয়ার বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এসব গ্রুপে হাতে বানানো নানারকম পিঠা-পুলি ও খাবারের অর্ডার নিয়ে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সেই খাবার। ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অর্ডার করলে মিলছে সবরকম খাবার। রুটি, পরটা, কেক থেকে শুরু করে বাদ নেই ঘরোয়া কোনো খাবার। আর এ সুযোগ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। শান্তা চৌধুরী পেশায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি বলেন, চাকরি করে এখন আর সংসার চলে না। করোনার কারণে ছয়মাস প্রায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। এরমধ্যে প্রায় দিশেহারা হয়ে উঠেছি সংসার নিয়ে। তাই নিজেই কিছু করার কথা চিন্তা করি। কিন্তু কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। পরে ভেবেচিন্তে অনলাইনের মাধ্যমে খাবার ডেলিভারি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এখন আমি নিজেই একজন উদ্যোক্তা। প্রতিদিনই খাবার ডেলিভারি দিচ্ছি। ভালো আয় হচ্ছে। আমি মনে করি সবাই চাইলে কিছু না কিছু করতে পারে। আমার বাবা নেই, আমরা দুই বোন ও এক ভাই। মা পোশাক কারখানায় কাজ করে। মায়ের টাকায়তো আর সংসার চলে না। তাই মায়ের সাথে আমাকেও সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আবার করোনাকালে মা ও আমার কারোই কাজ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে আমি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা ছিলাম সেটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতাম সেগুলোও এখন বন্ধ রয়েছে। এতে আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে অনেকটা অভাব-অনটনের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে আমাকে ও পরিবারকে। এমন সময়ই ফেসবুকের মাধ্যমে দেখি নানারকম খাবারের বিজ্ঞাপন। আমিতো ভালো রান্না করতে পারি। যেই ভাবনা সেই কাজ। আমিও শুরু করি। কোরবানির ঈদের আগে ফেসবুকে বিভিন্ন রান্নার ও গার্লস গ্রুপে রান্না করা খাবারের ছবি দিয়ে খাবার ডেলিভারির অর্ডার নেয় হয় বলেই পোস্ট করি। ওমনি কোরবানির ঈদে অনেকগুলো রুটি, পরটার অর্ডার পাই। এখন প্রতিদিনই কোনো না কোনো খাবার ডেলিভারির অর্ডার পাচ্ছি। জন্মদিন, বিবাহ বাষির্কী থেকে শুরু করে সবরকম অনুষ্ঠানের জন্য খাবার অর্ডার নিয়ে থাকি। সিঙ্গেল খাবারের অর্ডারও নিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে একটি কেক ৩শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত রাখি। নুডলস, অন্তন, রোল, বিভিন্ন পিঠা-পুলি হাতে বানানো নাস্তা বিরিয়ানি, মাছ, মাংসসহ সব খাবারই অর্ডার নিয়ে থাকি। বাসা-বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন অফিস-আদালতে যারা কাজ করে, ঘরে গিয়ে কিংবা দোকানের খাবার পছন্দ করে না তারা অর্ডার করলেও খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে যেহেতু বৈশ্বিক মহামারীর একটা বিষয় আছে তাই আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদে কাস্টমারের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। একটা রুটি ৮ টাকা ও একটা পরটা ৯ টাকায় বিক্রি করছি। কমপক্ষে ৩০ টা রুটি বা পরটা অর্ডার দিতে হবে। এসব বিজ্ঞাপনের সাথে লেখা থাকে খাবারের দামও।
অনলাইনের মাধ্যমে আরেক নতুন উদ্যোক্তা আফরোজা সেলিম। নুর বেকিং স্টুডিও পেজের এডমিন আফরোজা সেলিম বলেন, আমি প্রায় দুই বছর আগে অনলাইনের মাধ্যমে হোমমেড খাবার অর্ডার ডেলিভারি করতাম। নিজে কিছু করার চিন্তা থেকেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। এখন অনলাইনে আমার অনেক কাস্টমার। রান্না করতে আমার খুুব ভালো লাগে। এটি আমি শখের বসেই করি। সবরকম হাতে বানানো নাস্তা ও পিঠা-পুলির অর্ডার নিই। আমি নিজেই এখন স্বাবলম্বী।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট