চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাতের মুঠোয় ই-নামজারির সাফল্য

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৫৩ অপরাহ্ণ

বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এখন থেকে শতভাগ ই-নামজারি গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে দ্রুত সময়ে নামজারি খতিয়ান সম্পন্ন হচ্ছে।’

শুধু বোয়ালখালীতে নয়, জেলা ও উপজেলার সবকটি ভূমি অফিসে এখন ডিজিটাইজেশন বা ই-নামজারিতে নথি গ্রহণ করা হচ্ছে। কমছে সনাতন পদ্ধতি। চট্টগ্রামে ই-নামজারি এখন শতকের কোটা ছুঁইছুঁই। গত আগস্টে মহানগর ও জেলার ২১ ভূমি অফিসে ই-নামজারি হয়েছে ৯৭ শতাংশ। অনলাইন সেবা শতভাগ হওয়ার পর দালালচক্রের হয়রানি অনেকাংশে কমে আসবে বলে দাবি ভূমি সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিশ্চয়তা ও বিনিয়োগের সূচকে ৮ ভাগ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম জাকারিয়া গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘মে মাস থেকে শতভাগ ই-নামজারি হচ্ছে। তবে পূর্বের আপত্তি থাকা কিছু সংখ্যক ফাইল এখনো ম্যানুয়েলে রয়ে গেছে।’

জেলা প্রশাসনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফাইল জমা পড়েছে ৭ হাজার ১৮৫টি। এরমধ্যে পুরোনো ধাচে (ফাইল) জমা পড়েছে ৯৭৭টি। ই-নামজারিতে পড়েছে ৬ হাজার ২০৮টি। আগের মাসের (ডিসেম্বর) অনিষ্পত্তি ছিল চার হাজার ৬৫৬টি। জানুয়ারিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৭ হাজার ৬০টি। এরমধ্যে ই-নামজারিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৯টি। নিষ্পত্তির হার ছিল ৯৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আগস্ট মাসে তথ্যে দেখা যায়, মোট নামজারির ফাইল জমা পড়েছে ৫ হাজার ৫৬২টি। এরমধ্যে ই-নামজারি ছিল ৫ হাজার ৪৯টি। ফাইল ছিল ৫১৩টি। নামজারি নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৬টি। এতে ই-নামজারি ছিল ৪ হাজার ৮৮৮টি। ফাইল ছিল ৫৫৮টি। আগের মাসের অনিষ্পত্তি ছিল তিন হাজার ৭৭৯টি। নিষ্পত্তির হার ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলি সার্কেলের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে ই-নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন শতভাগ ই-নামজারিতে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে আবেদন গ্রহণ ও সেবাগ্রহীতারা সহজেই সেবা পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আগে ৪৫ বা ৬০ দিনের মধ্যে নামজারি খতিয়ান সৃজন করা হতো। এখন তা কমিয়ে ২১ কর্ম দিবসের মধ্যে করা হচ্ছে।’
এসি ল্যান্ড তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাণিজ্যিক ও রপ্তানিমুখী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং বেজা সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক জোনের নামজারি ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এমনকি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা রয়েছে।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভূমি অফিসের কার্যক্রমে এখন বড় সাফল্য আসছে ই-নামজারিতে। অনলাইনে ভূমির নামজারি বা ই-নামজারিতে সেবাপ্রার্থীদের ভূমি অফিসে যাওয়ার হার এবং ভূমি অফিসে ব্যয় ও সময়ের হার অনেকাংশে কমছে। সনাতন পদ্ধতিতে ৪৫ দিনের মধ্যে নামজারি করা হয়। আর অনলাইনে এ সেবা দেয়া হয় ২৮ দিনের মধ্যে।
বোয়ালখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ই-নামজারির সফটওয়ারে ২৮ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২৮ দিনের মধ্যে না হলে ‘লাল চিহ্ন’ দেখাবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, ই-নামজারি শতভাগ ছুঁইছুঁই করার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসছে ম্যানুয়াল পদ্ধতির নামজারি সেবা। ই-নামজারি অনেক সহজ, ভোগান্তিও নেই। নতুন প্রক্রিয়াটির বিষয়ে মানুষের ধারণা কম ছিল বলে দালালের স্মরণাপন্ন হতো। এতে খরচের পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হতো সেবাপ্রার্থীরা। ডিজিটাইজেশনের ফলে ভূমি সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতিও কমবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ই-নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদান সহজতর করায় জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশন পাবলিক সার্ভিস এডওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
কীভাবে করবে ই-নামজারি :
যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে নামজারির আবেদন করা যায়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হয়। নিজে করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এই আবেদন করে দিচ্ছেন। এরপর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে নামজারি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানানো হয়। নির্ধারিত শুনানির দিন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে হাজির হতে হয়। নামজারি সম্পন্ন হলে তাও এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয়।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট