চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নগরীতে ঝরে পড়ছেন ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ীরা

ইফতেখারুল ইসলাম

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:৫৬ অপরাহ্ণ

এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম শহরে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমেছে ৭ হাজার ৫৪৩ জন। কমেছে চসিকের রাজস্ব আদায়ও। মূলত করোনা দুর্যোগে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামে চলে গেছে। কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লাইসেন্স নবায়নে বড়-ছোট সব ব্যবসায়ীর উৎসে কর সমান। যাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বৈষম্য বলে উল্লেখ করছেন। চসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে নতুন ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় ১২ হাজার ২৭৫টি। পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন করা হয় ৬৭ হাজার ৭৭৬টি। মোট লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে ৮০ হাজার ৫১টি। ওই বছর ৩৪ হাজার ৫৪৪টি লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। এখাতে গত অর্থ বছর চসিকের আয় হয়েছে ২১ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ৮৬৯ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নতুন লাইসেন্স ইস্যু হয় ১২ হাজার ৪৫৪ টি। পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন ৬০ হাজার ৫৪টি। নতুন-পুরাতন মিলে মোট লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে ৭২ হাজার ৫০৮টি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে লাইসেন্স নবায়ন করেনি ৪৮ হাজার ৭৪০টি। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯হাজার ২৭২ টাকা।

চসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যে কোন ধরনের বৈধ ব্যবসা করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ৫০০ টাকায় ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারেন। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করা হয়। তবে লাইসেন্স নবায়নের সময় ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারকে তিন হাজার টাকা উৎসে কর দিতে হয়। একই সঙ্গে লাইসেন্স ফি’র উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। যাদের বড় ব্যবসা তারা লাইসেন্স নেয়ার সময় সরকারকে যে তিন হাজার টাকা উৎসে কর দেয় তা তারা বার্ষিক আয়কর দেয়ার সময় সমন্বয় করতে পারে কিন্তু যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আয়করের আওতামুক্ত অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় আয়কর দেয়ার মত নয় তারা ওই তিন হাজার টাকা সমন্বয় করতে পারে না। কোন কারণে লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারলে পরের বছর তাদের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তার সাথে যুক্ত হয় জরিমানা।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তারা জানান, মূলত ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরাই বেশি ঝরে পড়ছে। বড় ব্যবসায়ীরা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করে ব্যবসা করছেন। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যে পরিমাণ উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়েছে, বড় ব্যবসায়ীদের জন্যও একই। অথচ এক বছর আগে উৎসে কর ছিল ৫০০ টাকা। সরকার রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য উৎসে কর ৫০০ টাকা থেকে এক লাফে ৩০০০ টাকা করেছে এক বছর আগে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৫০০ টাকা বহাল রেখে বড় ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়ানো যেত। তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স নবায়ন করতে আগ্রহ দেখাত। এখন সিটি কর্পোরেশন বছরের বিভিন্ন সময় জরিমানা মওকুফ করে আগ্রহ সৃষ্টি আবার কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য ব্যবসায়ীদের বাধ্য করছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সালেহ সোলেমান পূর্বকোণকে বলেন, করোনাকালে ব্যবসায়ীরা চাপে আছে এটা সত্য। ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণে আয় কমে গেছে। তার চেয়েও বড় সমস্যা হল একটি ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে সরকারকে অগ্রিম ট্যাক্স দিতে হয় তিন হাজার টাকা। যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। এটা ঠিক আছে। যারা কর ফাঁকি দেয়, তারা ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার সময় করের আওতায় এসে যাচ্ছে। কিন্তু এক লাফে ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা করা উচিত হয়নি। আগের মেয়রকেও এ বিষয়ে সরকারের কাছে লিখিত অনুরোধ জানানোর অনুরোধ করেছি। বর্তমান প্রশাসককেও অনুরোধ করবো যাতে তা সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য সরকারের কাছে লিখিত অনুরোধ জানান। তাহলে ব্যবসায়ীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাইসেন্স নবায়ন করবে। তখন চসিকের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট