চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরকারের ‘গচ্ছা’ সিদ্ধ চালে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে আতপ চালের চাহিদা কম। তাই জোগান কম। ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডে সিদ্ধ চালের মিল থাকলেও ধারণক্ষমতা কম। তারপরও চট্টগ্রামে সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার টন। তার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৩৯২ টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ১৩ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৬৪ শতাংশ।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তদাশ গুপ্ত পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম হচ্ছে আতপ চাল নির্ভরশীল। সিদ্ধ চালের অভ্যস্থ কম। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আতপ চালের চাহিদা বেশি। তাই বিভিন্ন সময় অন্য জেলা থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে সরকারকে। এতে লাখ লাখ টাকার পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিক খরচ গুনতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে সিদ্ধ সংগ্রহ কমিয়ে আতপ চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দিলে সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।’ তিনি বলেন, সরকারের

একই কথা বললেন চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বললেন, চট্টগ্রামের নাজিরহাট, মিরসরাইসহ কয়েকটি উপজেলায় সিদ্ধ চালের মিল রয়েছে। তবে উৎপাদন ক্ষমতা কম। বিষয়টি আমি মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি।’
সরকার চলতি বোরো মৌসুমে সিদ্ধ চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৪৩ টন। তার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৩৯২ টন। সরকার মিল মালিকদের কাছ থেকে কেজিতে ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল কিনেছে। সরকারকে সিদ্ধ চাল দেওয়ার জন্য ২০টি মিল চুক্তি করেছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৭ মে থেকে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ৩১ আগস্ট ছিল ধান-চাল সংগ্রহের শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছে সরকার।
মিল মালিকদের দাবি, সরকার ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল ও ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল কিনছে। কিন্তু বাজারে ৪০-৪২ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। এরমধ্যে রয়েছে পরিবহন, শ্রমিক ও গুদাম শ্রমিকের খরচ। সবমিলে লোকসান দিয়ে সরকারকে চাল দিতে হচ্ছে।
মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তুদাশ গুপ্ত বলেন, ‘চুক্তি করায় সরকারকে চাল দিতে আমরা বাধ্য। লোকসান হলেও লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে চাল দিয়েছি। কারণ এখন লাভ না হলেও অন্যান্য বছর তো লাভ করেছি।’

আতপ চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯০৬৭ টন। তার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২৪ টন। সরকার ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল সংগ্রহ করছে।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘চালের দর বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।’

ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু থেকে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে অনাগ্রহ ছিল মিল মালিকদের। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় তাদের এই অনীহা। তারপরও অনেক চাপচাপিতে চুক্তি মতো চাল দিচ্ছেন না মিল মালিকেরা।

‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার মিলে ১২২ টি মিল সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকারের কাছ চাল বিক্রি করতে অনীহা তাদের।
সরকার কেজিপ্রতি ২৬ টাকা দরে ধান কিনছে কৃষকদের কাছ থেকে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ৯৩৯ টন। সংগ্রহ হয়েছে দুই হাজার ২৪২ টন।

খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাক। কৃষক বাজারে বিক্রি করেও ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে সরকারকে ধান-চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মিলার জানান, বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। তার উপর খাদ্য বিভাগের উৎকোচের যন্ত্রণা রয়েছে। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না খাদ্য গুদাম কর্মকর্তারা। প্রতিকেজিতে এক টাকা করে উৎকোচ দিতে হচ্ছে। চালের মানভেদে দুই টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দাবি করেন। বিশেষ করে নগরীর হালিশহর ও দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মিলাররা।

২০১৬ ও ২০১৭ সালেও একই অবস্থা হয়েছিল। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকার চাল দিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল মিল মালিকেরা। ফলে ওই দুই বছর সরকারি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর।

কৃষককে সরাসরি প্রণোদনা দিতে ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ না করে দালাল চক্র ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। ছিল নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট