চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অকশন শেডকে আবাসস্থল বানিয়েছে কাস্টমসের ২শ আনসার

অকশন গোলায় হাতছাড়া বন্দরের ২৮০ কোটি টাকা

নতুন শেডের ৫ বছরের ৬৫ লক্ষ টাকা ভাড়া দেয়নি কাস্টমস

সারোয়ার আহমদ

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:২২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫ একর জায়গা দখল করে থাকা পুরাতন অকশন গোলা থেকে গত ৫ বছরে অন্তত ২৮০ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সমপরিমাণ জায়গায় নির্মিত নতুন অকশন শেড থেকে বছরে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ভাড়া পাওয়ার কথা। কিন্তু গত ৫ বছরের ভাড়া বাবদ প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকাও বন্দরকে পরিশোধ করেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ।

গতকাল ২ সেপ্টেম্বর নতুন অকশন শেড উদ্বোধনের ৫ বছর পূর্ণ হলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখনো পুরাতন অকশন গোলাটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান নতুন অকশন শেডটি উদ্বোধন করেন। এর আগে বন্দরের ভেতরে জেটি ও ইয়ার্ড এলাকায় থাকা অকশন শেড বাইরে নিয়ে আসার জন্য ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে সমপরিমাণ জমির উপর ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি অকশন শেড নির্মাণ করে।

অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন অকশন শেড গত ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে বুঝিয়ে দিলেও এখন পর্যন্ত বন্দরের ভেতরে থাকা সব বাজেয়াপ্ত পণ্য নিলামে বিক্রি না করে কাস্টমস ওই অকশন শেড বুঝিয়ে দিতে পারছে না। একই সাথে ওই জায়গা কাস্টমসের ২শ আনসার সদস্য বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ৫ একর (২ লক্ষ ১৭ হাজার ৮শ বর্গফুট) অকশন গোলার জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এই পরিমাণ জায়গায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর কাজে ব্যবহার করা হলে বছরে কমপক্ষে সাড়ে তিন লক্ষ কন্টেইনার স্টোর ও ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ হতো। এর থেকে আয় হিসেবে গড়ে প্রতি কন্টেইনারে ২ হাজার টাকা ধরলেও বছরে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা বন্দরের আয় হতো। আর নতুন অকশন শেডে পুরাতন মালামাল হস্তান্তর ও নতুন ইয়ার্ড নির্মাণে ১ বছর ব্যয় ধরলেও বাকি ৪ বছরে বন্দর ওই জায়গা ব্যবহার করে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা আয় করতে পারতো চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দরের উপব্যবস্থাপক (এস্টেট) জিল্লুর রহমান পূর্বকোণকে জানান, ‘১৯৪৭ সালের স্পেশাল মেজার এক্ট’ অনুযায়ী সংরক্ষিত এলাকায় কোনো ব্যক্তি বিশেষের বসবাসের সুযোগ নেই। কিন্তু বন্দরের অভ্যন্তরে অকশন গোলায় কাস্টমসের ২ শ’ আনসার বসবাস করে এমন চিঠিও আমরা পেয়েছি। কিন্তু বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীসহ অন্যন্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত প্রায় ৩ হাজার কর্মী কাজ করেন। তারা কেউ বন্দরের অভ্যন্তরে বসবাস করেন না। এছাড়া কাস্টমসের ব্যবহার করা পুরাতন ও নতুন কোন অকশন শেডের জায়গাই কাস্টমসের নয়। জায়গা বন্দরের এবং অবকাঠামোও বন্দর নির্মাণ করে দিয়েছে। উপরন্তু ৫ একর জায়গায় নির্মিত আধুনিক নতুন অকশন সেডটি ব্যবহারের জন্য বন্দরকে বছরে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার কথা। সে এই ৫ বছরে মোট ৬৫ লক্ষ টাকা বন্দর পাওয়ার কথা। কিন্তু কাস্টমস তা কোন বছরই পরিশোধ করেনি’।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘বন্দরের অভ্যন্তরের অকশন গোলা নিয়ে কোন জটিলতা নেই। সেখানে অনেক নিলামযোগ্য পণ্য আছে। এসব পণ্য নিলামে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত ওই জায়গা খালি করে দেওয়া যাচ্ছে না। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই পণ্য নিলামে বিক্রি করে জায়গাটি খালি করা আরো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

নতুন অকশন সেডের ৬৫ লক্ষ টাকা ভাড়ার ব্যপারে কাস্টমস কমিশনার আরো বলেন, ‘বন্দর থেকে বাৎসরিক ভাড়ার ব্যপারে কোন চিঠি পাইনি’।

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পুরাতন অকশন গোলা প্রসঙ্গে বন্দর সচিব ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ‘৫ একর ওই জায়গায় বন্দরের নতুন ইয়ার্ড নির্মানের পরিকল্পনা আছে। ওই জায়গায় কন্টেইনার রাখা গেলে বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। করোনাকালে বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনারের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল ওই জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড থাকলে তা অনেক কমে যেত। এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত জায়গাটি বুঝিয়ে দেবে তত তাড়াতাড়ি বন্দর ওই জায়গাটি ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করতে পারবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট