চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গ্যাঁড়াকলে রপ্তানিকারকরা

জাহাজ কাতে বাড়ছে লোকসান

সারোয়ার আহমদ

২৬ আগস্ট, ২০২০ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের ১১ নম্বর জেটিতে কাত হওয়া জাহাজটি তিন দিনেও ছেড়ে যায়নি। জাহাজটির ঝুঁকি বিবেচনা করে বন্দর জেটি ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এই ফাঁদে আটকে এখন গ্যাঁড়াকলে পড়লো আমদানিকারকরা। দীর্ঘ সময় বন্দর জেটিতে অলস বসে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্দর, রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডাররা।

গত রবিবার সকাল ৭টায় পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘ওইএল হিন্দ’ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে জাহাজের একপাশে অধিক পরিমাণে ভারী কনটেইনার লোড হওয়া জেটির দিকে কাত হয়ে যায়। জাহাজটিতে ৭৪৭ বক্সে মোট ১ হাজার ২৬০ টিইইউস কন্টেইনার লোড করা হয়েছিল। এর মধ্যে খালি কন্টেইনার ছিল ১০৫টি। পরে জাহাজটির ৩৩টি বক্স ৬৬ টিইইউস কন্টেইনার নামিয়ে ভারসাম্য ঠিক করা হয়। কিন্তু তারপরেও জাহাজটিকে ঝুঁকি বিবেচনায় বন্দর জেটি ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। কারণ এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ডিজি শিপিং এর প্রিন্সিপাল অফিসার অব দ্য মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের (পিওএমএমডি) সার্ভে রিপোর্ট ছাড়া জাহাজ ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয় না। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার পিওএমএমডি চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা জাহাজটি সার্ভে করে গেছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত জাহাজটিকে অপেক্ষা করতে হবে।

এবিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, ‘কাত হয়ে যাওয়া জাহাজটি আজ (গতকাল মঙ্গলবার) পিওএমএমডি টিম সার্ভে করে গেছে। তাদের সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী জাহাজটি ছাড়ার উপযোগী হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। এ ধরনের ঘটনায় মূলত সমুদ্রের মাঝপথে জাহাজ ডুবে যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করে জাহাজকে ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘ওইএল হিন্দ’ বন্দর ছেড়ে না যাওয়ায় বন্দরেরও ক্ষতি হয়। কারণ একটি জেটি জাহাজটি দখল করে আছে।’
এদিকে ‘ওইএল হিন্দ’ জাহাজের বেশিরভাগ রপ্তানি কন্টেইনারই তৈরি পোশাক শিল্পের। জাহাজ বসে থাকার কারণে সঠিক সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডারকে জানিয়েছি যেন আমাদের কন্টেইনারগুলো জাহাজে বসিয়ে না রেখে অন্য জাহাজে করে মাদার ভ্যাসেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেয়। অন্যথায় বায়ারদের সময় মত পণ্য পৌঁছে দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডাস এসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক খায়রুল আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, ‘রপ্তানিকারকদের কন্টেইনার জাহাজে অলস বসে থাকা সত্যি দুঃখজনক। কারণ সময়মত বায়ারদের পণ্য পৌঁছে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে বায়ার আর অর্ডার নাও দিতে পারে। তবে দুর্ঘটনাতো আগে থেকে জানান দিয়ে আসে না। সেটিও বোঝা উচিত। আর কাত হয়ে যাওয়া জাহাজের কন্টেইনার দ্রুত পৌঁছে দিতে অন্য জাহাজে ওই কন্টেইনার তুলে দেওয়া আরো ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ একবার এই জাহাজ কাত হয়েছে। এখন অভিজ্ঞদের পরামর্শ বা সার্ভের আগে কন্টেইনার নামাতে গেলে হয়তো আরো বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই বন্দর যেভাবে কাজ করছে তার উপর আস্থা রাখা উচিত। কারণ জাহাজ জেটি ছেড়ে না গেলে বন্দরেরও ক্ষতি।’

অন্যদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্ট্রেইটস ওরিয়েন্ট লাইনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘ওইএল হিন্দ’ এর স্থানীয় হিসেবে রয়েছে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড। তাদেরও এই জাহাজ বসে থাকা প্রতিদিন হাজার ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট