চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রবাসীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

মোহাম্মদ আলী

১৯ আগস্ট, ২০২০ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

করোনার এ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু প্রবাসী কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইনসহ অন্যান্য দেশসমূহের প্রবাসীরা এখনো ফিরতে পারছেন না। সেসব দেশসমূহে প্রবেশে সরকারের অনুমতি ও বিমান চলাচল না থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রবাসীরা।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে আলোচ্য দেশসমূহ থেকে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। কিন্তু করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। পুনরায় বিদেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেকে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনার কারণে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের সংখ্যা হবে কয়েক লাখ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হবে লক্ষাধিক। এসব প্রবাসী ২০১৯ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছুটি কাটাতে আসেন দেশে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হলে তারা দেশে আটকা পড়েন। বর্তমানের অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে দেশে থাকা অবস্থায় চাকরিও হারিয়েছেন। যারা ব্যবসায় জড়িত তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আরো বেশি।

এদিকে করোনার কারণে দেশে আটকা পড়া প্রবাসীদের নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা। এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (নিরাপদ শ্রম অভিবাসন) আবদুস সবুর। ইপসা’র গবেষণায় দেখা যায়, ৮০ শতাংশ বিদেশ ফেরত অভিবাসীর ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে এবং তাদের বিশাল একটি অংশ গন্তব্য দেশের নিয়োগ কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এব্যাপারে তাদের মধ্যে অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে। ৬০ শতাংশ বিদেশ ফেরত অভিবাসী বিদেশ থেকে আসার সময় সঙ্গে করে যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছিলেন তা শেষ হয়ে গেছে। অনেক অভিবাসী এখন আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার বা ঋণ করা টাকায় চলছেন। এই মহামারী কোভিড-১৯ তাদের দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের কাছে বিদেশ থেকে যারা দেশে আসেন তাদের কোন তালিকা নেই। যারা বিদেশ যান তাদের তালিকা থাকে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘পহেলা মার্চ থেকে বিদেশ থেকে দেশে আসেন ৩৯ হাজার ২৮৩ জন প্রবাসী। এর মধ্যে মার্চে দেশে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ৯৭৩ জন। এরা শুধু ইতালি, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী নাঙ্গলমোড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ছুটি কাটাতে দেশে আসি। কিন্তু করোনার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আর কুয়েতে ফিরতে পারছি না। আমার মতো চট্টগ্রামে আরো কয়েক হাজার কুয়েত প্রবাসী আটকা পড়েছেন। তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন। তাই এ মুহূর্তে আটকে পড়া প্রবাসীদের কুয়েত পাঠাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নিতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে কুয়েত প্রবাসীরা।’

নুরুল আমিন চৌধুরীর মতো একই কথা বলেছেন কুয়েতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কমিউনিটির যুগ্ম সম্পাদক ও পটিয়া কুসুমপুরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুদ্দিন। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘ছুটি কাটাতে গত ২৯ জানুয়ারি দেশে আসি। কিন্তু করোনার কারণে গত মাসেও কুয়েতে ফিরতে পারিনি। এর মধ্যে গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ছিল। কিন্তু ৮৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি টিকেটও ক্রয় করি। কিন্তু কুয়েত সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়। এ কারণে কুয়েতে যেতে না পেরে আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট