চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বকেয়া পেয়ে চামড়া কেনার প্রস্তুতি আড়তদারদের

কোরবানির চামড়া সংগ্রহ

বকেয়া পেয়ে চামড়া কেনার প্রস্তুতি আড়তদারদের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৯ জুলাই, ২০২০ | ১:১০ অপরাহ্ণ

গত বছরের বকেয়া পাওনা পাওয়ার আশ্বাসে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু টাকা ইতিমধ্যে পেয়েছেন অনেকেই। বকেয়া পাওনার জন্য ঢাকায় রয়েছেন কয়েকজন। টাকা পাওয়ার পর গুদাম ও শ্রমিক প্রস্তুত এবং লবণ কিনে মজুদ করেছেন তারা। বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছরের পাওনা মিটিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি মালিকেরা। ৫০-৭০ শতাংশ বকেয়া হাতে পেয়েছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। বকেয়া পাওনার পর কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন আড়তদাররা। গুদাম ও শ্রমিক প্রস্তুত রেখেছেন। কিনে রেখেছেন লবণও। তবে পুরোনো বকেয়া (২০১৫-১৮ সাল) এখনো পাইনি। ঈদুল আজহার পরে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত ১১২জন ও সমিতির বাইরে ৭০ জনের মতো ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছরের মতো দেশের সম্পদ যাতে নষ্ট না হয়, এবার সজাগ রয়েছেন আড়তদাররা।

গত বছর কোরবানির কাঁচা চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিক্রি করতে না পেরে হাজার হাজার চামড়া রাস্তায় ফেলে দিতে হয়েছে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসান গুনেছেন। চসিক রাস্তা থেকে লক্ষাধিক পচা চামড়া সংগ্রহ করে ডাম্পিং স্টেশনে পুঁতে ফেলেছিল। এছাড়াও নগরী ও জেলায় বিভিন্ন মাদ্রাসা-এতিমখানা ও মসজিদে সংগ্রহকৃত চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে এতিম-মিসকিনের ‘হক’ বঞ্চিত হয়।

চামড়া আড়তদার মো. শাহজাহান বলেন, ‘পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ঢাকায় এসেছি। আশা করছি, কাল-পরশুর মধ্যে টাকা পেতে পারি’। তিনি বলেন, অনেকেই বকেয়া পাওনা হাতে পেয়েছেন। টাকা পাওয়ার পর কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
চামড়ার দর নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর চামড়ার দর বেধে দেয়। চলতি বছর ঢাকার চামড়ার দর দিয়েছে ঘনফুট প্রতি ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরের জন্য ২৮-৩২ টাকা।

এ বিষয়ে আড়তদার সমিতির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি বছর কাঁচা চামড়ার দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবে। বিষয়টি খেয়াল রেখে চামড়া কিনতে হবে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, গরমকালে চামড়া বেশি নষ্ট হয়। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঘোরাঘুরি করে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে আতুরার ডিপো চামড়া আড়তে বিক্রি করতে আনে, তখন চামড়ার গুণমান নষ্ট হয়ে যায়। বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হয়। বিকেল ৪-৫ টার মধ্যে আড়তে নিয়ে আসতে হবে। তখন চামড়ার মান ভালো থাকে, গুদামজাত করা যায়। তিনি দাবি করেন, সরকার যে দাম বেধে দেয় সেই দর দিয়ে কখনো চামড়া কিনে না ট্যানারি মালিকেরা।

বাংলাদেশে চামড়ার চাহিদার ৮০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহা থেকে। মৌসুমী ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এই চামড়া সংগ্রহ করেন। কোরবানির পশুর সংগৃহীত এসব চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের হাত ঘুরে যায় ট্যানারি মালিকদের কাছে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের চামড়া ঢাকানির্ভর হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে শুধুমাত্র একটি ট্যানারি রয়েছে। চট্টগ্রামের সংগৃহীত চামড়ার ১০ শতাংশ কিনছে ওই ট্যানারি। বাকি চামড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়।
কোরবানির চামড়ার গুণগতমান ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোরবানির গরু হৃষ্টপুষ্ট দেখেশোনে কেনা হয়। চাহিদার ৮০ শতাংশ চামড়ার কোরবানির চামড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়। ট্যানারি মালিকদের কারণে চামড়ার বাজার ধস নেমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়া (ওয়েট ব্লু) রপ্তানির বাজার উন্মুক্ত করা হলে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা সুফল পাবে। পুঁজি বা মূলধনের নিশ্চয়তা পাবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। একই সঙ্গে সাধারণ-মৌসুমী ব্যবসায়ী ও এতিমখানা-মাদ্রাসাগুলোও সুবিধা পাবে। কারণ অনেক মাদ্রাসা ও এতিমখানা চামড়ার টাকার উপর নির্ভরশীল।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট