চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্মস্থল নিয়ে উদ্বিগ্ন রেমিটেন্স যোদ্ধারা

মোহাম্মদ আলী

৯ জুলাই, ২০২০ | ৪:০২ অপরাহ্ণ

মহা টেনশনে আছেন দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা। বিমান চলাচল বন্ধ এবং গন্তব্যের দেশে ফিরতে অনুমতি না থাকায় প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের শেষ হয়ে গেছে ভিসার মেয়াদও।

টেনশনে পড়া প্রবাসীদের বেশিরভাগ থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, বাহরাইনসহ অন্যান্য দেশসমূহে। এছাড়া মালয়েশিয়া, আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীও রয়েছেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে তারা ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। পুনরায় বিদেশে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনেকে শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনার কারণে দেশে আটকেপড়া প্রবাসীদের সংখ্যা হবে কয়েক লাখ। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হবে লক্ষাধিক। এসব প্রবাসী ২০১৯ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দেশে ছুটি কাটাতে আসেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হলে তারা দেশে আটকা পড়েন। বর্তমানের অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে দেশে থাকা অবস্থায় চাকরিও হারিয়েছেন। যারা ব্যবসায় জড়িত তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আরো বেশি।

জানতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের কাছে বিদেশ থেকে যারা দেশে আসেন তাদের কোন তালিকা নেই। যারা বিদেশ যান তাদের তালিকা থাকে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘পহেলা মার্চ থেকে বিদেশ থেকে দেশে আসেন ৩৯ হাজার ২৮৩ জন প্রবাসী। এর মধ্যে মার্চে দেশে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ৯৭৩ জন। এরা শুধু ইতালি, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে ঠিকাদারী ব্যবসা করেন মো. সেকান্দর মিয়া চৌধুরী।
রাউজানের কদলপুর গ্রামের ছমদ আলী চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা মো. সেকান্দর মিয়া চৌধুরী চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দেশে আসেন। এক মাস ছুটি কাটিয়ে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে তিনি আর ফিরে যেতে পারেননি। এ নিয়ে তিনি বড় ধরনের টেনশনে রয়েছেন। কখন কুয়েতে ফিরতে পারবেন তা নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

কুয়েত প্রবাসী মো. সেকান্দর মিয়া চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেশে আটকে পড়ার কারণে আমার ঠিকাদারী ব্যবসার বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে গাড়ি ও বিভিন্ন মূল্যবান মালামালও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখন কুয়েত ফিরতে পারবো তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছি।’
এদিকে করোনার কারণে দেশে আটকাপড়া প্রবাসীদের নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা। এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (নিরাপদ শ্রম অভিবাসন) আবদুস সবুর। ইপসা’র গবেষণায় দেখা যায়, ৮০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসীর ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে এবং তাদের বিশাল একটি অংশ গন্তব্য দেশের নিয়োগ কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কাজ করছে। ৬০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী বিদেশ থেকে আসার সময় সঙ্গে করে যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছিলেন তা শেষ হয়ে গেছে। অনেক অভিবাসী এখন আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার বা ঋণ করা টাকায় চলছেন। এই মহামারী কোভিড-১৯ তাদের দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

র্পূবকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট