চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শিশুখাদ্যের আমদানি শর্ত আগের মতোই

আজ বন্দর দিবস

করোনার কঠিন সময়েও সচল

১৩৩তম বর্ষপূর্তি চট্টগ্রাম বন্দরের

সারোয়ার আহমদ

২৫ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:২০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের রয়েছে আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের যারা শাসন করেছেন তার নেপথ্যে ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এটি এমন একটি বন্দর যেটি কিনা নিজেই নিজেকে নিয়ে গর্ব করার মত জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা। সারা বাংলাদেশ জানে এই চাকা বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতির কি দুর্দশা হয়। বন্ধ হয়ে যায় দেশের আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্য।
এই গৌরবের বন্দর এখন আর বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যুগে যুগে অনেক শাসকদের যেমন চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে নজর ছিলো, তেমনি এখনো এশিয়ার অনেক দেশ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। ভারত-বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের প্রস্তুতি তারই একটি উদাহরণ।
আজ ২৫ এপ্রিল (শনিবার) জাতির গৌরব ও অহংকার, অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার এই চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩ তম বর্ষপূর্তি। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ২৫ এপ্রিল পালন হচ্ছে বন্দর দিবস হিসেবে। কিন্তু এবারের বন্দর দিবস পালনের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নেই কোন আয়োজন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এবছর চট্ট্রগ্রাম বন্দরের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনাড়ম্বরভাবে কোন আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত পালন করার পরিকল্পনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় সাড়ে তিন শ’ বছর আগে থেকে। আর্য যুগে ইউরোপীয় বণিকরা বাণিজ্য করতে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতেন। ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম বন্দরকে শেটগাম বা গঙ্গার অববাহিকা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আরবের প্রসিদ্ধ পর্যটক ইদ্রিশ ১১৫৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। তিনি চট্টগ্রামকে ‘কর্ণফুল’ বলে আখ্যায়িত করেন। চট্টগ্রামের কথা ওঠে আসে ইবনে বতুতা ও মার্কোপোলোর ভ্রমণ কাহিনীতেও। মেঘনার মোহনার কাছে চট্টগ্রাম বন্দর নৌ চলাচলের উপযোগী হওয়ায় গৌড় সা¤্রাজ্যের একমাত্র প্রবেশ দ্বার ছিল চট্টগ্রাম। ইতিহাস বিদদের মতে ইংরেজ শাসনের প্রথমদিকে বছরে একটাকা সেলামির বিনিময়ে নিজব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে, ১৮৬০ সালে প্রথম দু’টি স্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া সরকারের পোর্ট কমিশনারস এ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় আধুনিক চট্টগ্রাম বন্দরের। প্রথমদিকে এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫০ হাজার টন। ১৮৯৮ সাল হতে পালের জাহাজের পরিবর্তে বড় বড় বাষ্পচালিত জাহাজের জন্য বন্দরের কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বন্দরের ভিতরে রেল যোগাযোগ না থাকায় ১৯১০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ও পোর্ট কমিশন যৌথভাবে ৪টি জেটি নির্মাণ করে। পরে, পোর্টের একাংশের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হাতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। কারণ পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বন্দর ছিল চট্টগ্রামে। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনকে পোর্ট ট্রাস্টে পরিণত করা হয়। মুক্তি যুদ্ধের পর স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টকে রহিত করে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। যা আজ সময়ের পরিক্রমায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়েছে। সময়ের সাথে বেড়েছে বন্দরের পরিধি।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। গতবছর চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লক্ষাধিক কন্টেইনার হ্যান্ডেল করেছে এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা লয়েড লিস্ট রেজিস্টারের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ত কন্টেইনার বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এই অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
তবে বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীনসময়ে আমদানিকৃত মালামাল ডেলিভারি সীমিত হওয়ায় বন্দরে সাময়িক কন্টেইনার জট ও জাহাজ জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানি কন্টেইনার অফডকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত বন্দরকে আবার সচল করেছে। আমদানিকারকগণ দ্রুততম সময়ে তাদের আমদানিকৃত পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরকে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেও সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এর ফলে বর্হিবিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘœ রাখার স্বার্থে ২৪/৭ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও কাজ করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটর, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স, বিকডা, শিপিং এজন্টগণ, শ্রমিকবৃন্দ, বন্দর ব্যবহারকারীগণ ও স্টেকহোল্ডারগণকে বন্দরের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট