চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এনবিআর’র সিদ্ধান্তে আটকে আছে বন্দরের কন্টেইনার জটের সমাধান

আইসিডিগুলোতে বাড়তি কন্টেইনার রাখতে আপত্তি নেই : বিকডা কর্তৃপক্ষ

সারোয়ার আহমদ

১৭ এপ্রিল, ২০২০ | ৪:৩৭ অপরাহ্ণ

চলমান বন্দরের কন্টেইনার জট থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা। কারণ গত সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসনে আয়োজিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব দেওয়া হয় ‘অফডকগুলো থেকে ৩৭ ধরনের পণ্য ছাড়াও সব পণ্যের ডেলিভারিও দেওয়া যেতে পারে’। এতে বন্দরের বর্তমান কন্টেইনার চাপ অনেক কমে যাবে।
বন্দর সূত্র জানায়, বিশ্বের কোন দেশে বন্দর থেকে পণ্য খালাসের প্রক্রিয়ার প্রচলন নেই। এমনকি পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের বন্দর থেকেও পণ্য খালাস হয় না। বন্দরে শুধুমাত্র পণ্য জাহাজে উঠানামার কাজ করা হয়। এরপর পণ্যবাহী কন্টেইনার চলে যায় বিভিন্ন কন্টেইনার ডিপোতে। সেখান থেকেই শুল্কায়ণ শেষে পণ্য খালাস বা রপ্তানির কাজ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বন্দরকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে আজকে বন্দরের এই জটলা।
এনবিআর’র সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের সভায় অফডকে সব ধরণের পণ্যে কন্টেইনার পাঠানোর এবং ডেলিভারির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাব রাজস্ব বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের পর জানা যাবে অফডকে কন্টেইনার যাবে কিনা।
অফডক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোর্টস এসোসিয়েশন এর সচিব রুহুল আমিন শিকদার পূর্বকোণকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছিল অফডকে কত কন্টেইনার ধারণ করতে পারবো। আমরা চিঠিতে জানিয়েছি অফডকে ১৮ হাজার ৭৭৫ টিইইউস কন্টেইনার রাখা যাবে।
বিডার ১৮টি অফডক থেকে দেশের রপ্তানির ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টিইইউস কন্টেইনার প্রসেস করা হয়। শুধু মার্চ মাসেই ৫৪ হাজার টিইইউস রপ্তানি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে। এখনো এই ১৮টি অফডকে ১৮ হাজার ৭৭৫ টিইইউস কন্টেনার রাখা যাবে। আর সেটি সম্ভব হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান যে অচল অবস্থা তা অনেকাংশেই কেটে যাবে।
বন্দরের চেয়ে অফডকগুলোতে চার্জ বেশি উল্লেখ করে ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশন (বাফা) এর পরিচালক খায়রুল আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, অফডকে চার্জ আর বন্দরের চার্জ এক নয়। অফডকের চার্জ বেশি। তাছাড়া বিকডার বর্ধিত চার্জ নিয়েও আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের সাথে নানা জটিলতা চলছে। তাই ৩৭ ধরনের পণ্যের বাইরে অন্য পণ্যের কন্টেইনার রাখার চার্জ বন্দরের চার্জের সমপরিমান হতে হবে। অন্যথায় আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে পণ্যের দাম বাড়বে।
একই বিষয়ে উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, এখন জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় অফডকগুলোকে অবশ্যই বন্দরের সমপরিমান চার্জে কন্টেইনার রাখার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এই মূহুর্তে আমদানি-রপ্তানি সচল রেখে বন্দর ও দেশ বাঁচাতে হবে। অধিক চার্জ ও অধিক মুনাফার ধারণা বদলাতে হবে আইসিডিগুলোকে।
তিনি আরো বলেন, এনবিআরের সিদ্ধান্ত নিতে কাল ক্ষেপণ করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব আইসিডি’র ব্যাপারে প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস। এই মূহুর্তে বন্দরের অভ্যন্তরে তার চেয়ে বেশি কন্টেইনার আছে বলে জানান বন্দর সূত্র। এই অবস্থায় গত বুধবার কন্টেইনার খালাস হয় মাত্র ১১শ টিইইউস। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ডেলিভারি হতো ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউস কন্টেইনার। বর্তমানে আউটার ২৮টি জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বন্দরের জায়গা না থাকায় সেসব জাহাজকে বার্থিং দেওয়া যাচ্ছে না।
তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩৭ ধরণের পণ্য ছাড়াও সব পণ্যের কন্টেইনার সংরক্ষণ, স্ট্যাফিং এবং ডেলিভারির সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে। এর অপেক্ষায় আছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট