চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনোয় কন্টেইনার জট

বিলম্ব মাশুলের প্রভাব ভোগ্যপণ্যে

শিপিং এজেন্টদের অতিরিক্ত মাশুলের কারণে দাম বাড়ছে ডালজাতীয় পণ্যের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫২ পূর্বাহ্ণ

করোনাং বন্দর-ডিপোতে শ্রমিক-পরিবহন সংকট, ব্যাংক ও শিপিং এজেন্টের জটিলতায় দেখা দিয়েছে কন্টেইনার জট। এতে পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মাশুল। যার প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের ওপর। ইতিমধ্যেই ডালজাতীয় পণ্যের দাম মণপ্রতি দুইশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা জানান, শিপিং এজেন্টদের খামখেয়ালিপনার কারণে ভোগ্যপণ্যের কন্টেইনার বার্থিং পেতে ক্ষেত্রেবিশেষে এক মাস পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। করোনোভাইরাস আতঙ্কে বন্দর ও ডিপোতে শ্রমিক এবং পরিবহন সংকটের কারণে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। এতে পণ্যবোঝাই কন্টেইনার ছাড় পেতে সময়ক্ষেপণের অতিরিক্ত মাশুল দিতে হচ্ছে পণ্য আমদানিকারকদের। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর গ্রুপের পরিচালক মীর মো. হাসান পূর্বকোণকে বলেন, জাহাজ বার্থিং থেকেই সময় ক্ষণগণনা শুরু করে শিপিং এজেন্টগুলো। বার্থিং থেকে ডিপোতে পণ্য আনা পর্যন্ত সাধারণত ১২-১৪ দিন সময় লেগে যায়। তার ওপর করোনো সংকটের কারণে তা এখন এক মাস পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। শ্রমিক ও পরিবহন সংকটের কারণে পণ্য খালাসে এই সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। তিনি বলেন, এই সংকটময় অবস্থায় ব্যাংক ও শিপিং এজেন্টদের খামখেয়ালিপনার কারণে সময়মতো ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না। দু-তিন ঘণ্টা অফিস খোলা থাকে। এই জটিলতার ফাঁদে পড়ে পণ্য খালাস ছাড়পত্র নিতে দীর্ঘতর হচ্ছে। এরফলে শপিং এজেন্টদের গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।

গত সপ্তাহে ২০টি কন্টেইনার ছাড় নিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে উল্লেখ করে আমদানিকারক মীর মো. হাসান বলেন, শিপিং অফিস দুই ঘণ্টা খোলা থাকলেও কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। আবার ব্যাংক খোলা থাকলে শিপিং অফিস খোলা থাকে না। করোনো সংকটের কারণে শ্রমিক ও পরিবহন সংকট তো রয়েছেই। শিপিং এজেন্টদের জটিলতার কারণে কয়েক দিনের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে।
করোনা সংকটের কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিপিং এজেন্ট ও ডিপো মালিকেরা অতিরিক্ত মাশুল আদায় করছে। অতিরিক্ত মাশুলের কারণে ভোগ্যপণ্যের দামও বাড়তে শুরু করেছে।
দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ছোলার দাম মণপ্রতি ২০০০-২০৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রায় ৪শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মসুর ডাল মণপ্রতি ১৮শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা। মটর ডাল কেজিতে বেড়েছে চার টাকা। আরও কয়েক পদে পণ্যের দামও বাড়তে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আমদানিকারক বলেন, বন্দরের বার্থিং থেকে ডিপোতে কন্টেইনার পৌঁছা পর্যন্ত এক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। তারপর ব্যাংক, কোয়ারেন্টাইনে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাড়পত্র ও শিপিং এজেন্টের অনুমতিপত্র নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় আমদানিকারকের। বার্থিং থেকে ছাড়পত্র পেতেই লেগে যায় ১২-১৪ দিন। শিপিং এজেন্টগুলো ১৪ দিন রেওয়াতি সময় দিলেও ডিপোতে কেন্টেইনার পৌঁছতেই ১৪ দিন পেরিয়ে যায়। বর্তমানে কন্টেইনার জটে পণ্য খালাস পেতে মাসপর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। শিপিং এজেন্ট ও ডিপোতে গুনতে দ্বিগুণ হারে জরিমানা। তারা দাবি করেন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরা, ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশে জরিমানার ক্ষণগণনা শুরু হয়ে ডিপো থেকে পণ্য খালাস থেকে। আর বাংলাদেশে শুরু হয় বার্থিং থেকে।
শিপিং এজেন্টদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিনিয়ত বড় মাশুল গুনতে হচ্ছে দাবি করে আমদানিকারকেরা জানান, দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে সারাদেশে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৮০ শতাংশ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়। যার বেশির ভাগই খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় ক্লিয়ারিং বন্ধ হয়ে পড়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তারল্য সংকটে ব্যাংকের বৈদেশিক শাখার লেনদেনও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ক্লিয়ারিং না থাকায় এলসি খুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। সময় মতো এলসি খুলতে না পারায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়া পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আনা হয়। বন্দর এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন ঘাট থেকে পণ্য খালাস করা হয়। কিন্তু প্রতিটি ধাপে শ্রমিক ও পরিবহন সংকট রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। একই অবস্থা ডিপোতে। মাদার ভেসেল থেকে ডিপোতে পণ্য পৌঁছা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত বিলম্ব মাশুল গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট