চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা ঝুঁকি নিয়ে আজ চালু হচ্ছে গার্মেন্টস

১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধের অনুরোধ বিজিএমইএ সভাপতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

করোনা ঝুঁকির মধ্যেই দশ দিন ছুটিশেষে আজ রবিবার থেকে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো চালু হচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে সরকার যখন সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছে ঠিক সেই সময়ে গার্মেন্টস কারখানাগুলো খোলার সিদ্ধান্ত কতোটা যৌক্তিক, তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেছে সংশ্লিষ্টরা। তবে গতকাল শনিবার রাতে বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ রাখার জন্য মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
কাজে যোগ না দিলে চাকরি চলে যাবে- এমন আশঙ্কায় অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চলে এসেছেন। জীবিকার টানে মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে কর্মস্থলে ছুটে আসার বিষয়টি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা রোধ করার ক্ষেত্রে কতোটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সেই আতঙ্কে ভুগছেন শ্রমিকদের পরিবার ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
শনি ও রবিবার কিছু কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত শোনার পর শুক্রবার থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে রওনা হন অনেক পোশাক শ্রমিক। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বেশিরভাগই হেঁটে রওনা হন। চট্টগ্রামের কেইপিজেড ও সিইপিজেডের বেশ কয়েকটি কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মিলে বর্তমানে চালু কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। এর সঙ্গে আছে সিইপিজেড ও কেইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেডের হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিক রাস্তায় বেরুলে সামাজিক দূরত্ব কিভাবে রক্ষা হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন জনগণ।
যদিও, গার্মেন্টস মালিকদের বৃহৎ দুই সংগঠন বিজিএমইএ-বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়েই মালিকদেরকে কারখানা খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনার দায় মালিককেই বহন করতে হবে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে কিছু পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথাটি মাথায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
দেশে করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হলেও পোশাক কারখানার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ অধিকাংশ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে অনেক শ্রমিক বাড়ি ফিরে যান।
বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বাণিজ্যিক বিষয়ক একটি অনলাইন পোর্টালকে সাক্ষাৎকারে বলেন, যে সমস্ত শ্রমিক গার্মেন্টস এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে এবং পরে বাড়িতে চলে গেছেন তাদের চাকরি যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ আছে তারা খুলবে। যে সমস্ত শ্রমিকরা গ্রামে চলে গেছেন তারা তো গার্মেন্টস বন্ধ দেওয়ার আগে চলে গেছেন। তারা তো আর গতকাল যান নাই। সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চ গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছিল, আর আমরা গার্মেন্টস বন্ধ করেছিলাম ২৬ মার্চ। যারা চলে গেছেন সে দায়িত্ব তো আমরা নেব না।’
যে সমস্ত শ্রমিকরা ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গেছেন তারা কিভাবে আসবেন। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে রুবানা হক বলেন, যারা বাড়িতে চলে গেছেন ওনারা ফেরত আসছেন কেন। ওনাদেরকে তো কেউ বলে নাই চাকরি চলে যাবে। তারা কেন ফেরত আসছেন। তারা কেন চাকরি চলে যাওয়ার ভয় করবেন। কোন সংগঠন থেকে কোন মালিক এখনো বলে নাই যে শ্রমিকের চাকরি যাবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি এম এ সালাম জানান, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সকল গার্মেন্টস বন্ধ থাকবে। বিজিএমইএ’র সভাপতি গার্মেন্টস বন্ধ রাখার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে যে সব গার্মেন্টস’র অতি জরুরি তারা শর্ত সাপেক্ষে খোলা রাখতে পারবে। বর্তমানে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে একযোগে কাজ করা আহ্বান জানান তিনি।
কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব সাধারণ জনগণ। এম এ সাঈদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন-“মসজিদের নামাজের জন্য সতর্কতা মেনে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে। আগামীকাল হতে গার্মেন্টস কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য খোলা রেখে বিপদমুক্ত রাখা কতখানি যুক্তিযুক্ত? তার উপর যানবাহন চলাচল, ট্রেন চলাচল, লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার সাধারণ মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিন থাকার জন্য সেনাবাহিনীকে কঠোর অবস্থানে রাখা হয়েছে। আবার লোক সমাগম না হওয়া জন্য মার্কেট ও জরুরি দোকানগুলো ছাড়া বাকীগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। আসলে এইভাবে কি আমাদের করোনা মোকাবেলা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের প্রতি সম্মানের সাথে সবিনয়ে আমার প্রশ্ন? আমার মনে হয় সবার সম্মিলন প্রচেষ্টা ছাড়া এই মহামারী মোকাবেলা সম্ভব নয়।”

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট