চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ক্ষতির মুখে দুগ্ধ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ মার্চ, ২০২০ | ৬:১৫ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আতঙ্কে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামও অচল। সব ধরনের দোকান বন্ধ। কাঁচা বাজারসমূহে সীমিত আকারে দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। পচনশীল পণ্য সংরক্ষণের কোন সুযোগ না থাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দুগ্ধ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চট্টগ্রামের দুগ্ধ খামারিরা। চিটাগং ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দিন পূর্বকোণকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে প্রায় ১২০০টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামারে দৈনিক একলাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। অধিকাংশ খামারি দুধ বিক্রি করেন মিষ্টির দোকানে। কিন্তু করোনা রোগের কারণে অন্যান্য দোকানের ন্যায় মিষ্টির দোকানও বন্ধ। তাই খামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। মিল্ক ভিটা কিছু দুধ কিনত। এখন তারাও কিনছে না। তাই খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

অপরদিকে, এসব খামারে প্রাণীর খাদ্য, শ্রমিক পরিচালনায় প্রতিদিন খামারিদের টাকা খরচ হচ্ছে। এই দুর্যোগের সময় বেড়ে গেছে প্রাণী খাদ্যের দামও। বস্তা প্রতি কয়েকশ’ টাকা দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে মিল্ক ভিটা বেশি করে দুধ কিনে গুঁড়ো দুধ তৈরি করতে পারে। এছাড়া দুগ্ধ খামারগুলোকে ভ্যানে করে পাড়ায় পাড়ায় দুধ বিক্রির অনুমোদন সরকার দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিক্রয়কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন খামারের মালিক।

বহদ্দারহাট বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সওদাগর পূর্বকোণকে বলেন, প্রতিদিন বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে অন্তত ৫০ ট্রাক সবজি আসতো। গতকাল এসেছে মাত্র তিন ট্রাক। তাও সস্তায় বিক্রি করে চলে গেছে। কাল থেকে তারা সবজি নাও আনতে পারেন। তিনি জানান, বাজারে ক্রেতা কমে যাওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। অপরদিকে, গ্রামে মানুষ বেড়ে যাওয়ায় সেদিকে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তবে দোহাজারীতে যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয় তা কেনার মত লোক সেখানে নেই। তাই কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে যতটুকু চাহিদা আছে ঠিক ততটুকুই তুলছেন। সবজি বিক্রি করতে না পেরে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর অন্যান্য কাঁচা বাজারেরও একই দশা। যে পেঁয়াজ নিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা এতো কারসাজি করেছেন, হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এবার তাদের করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে গত তিনদিনে ১৩ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ১২০ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। অর্থাৎ
প্রায় ১৫৬০ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। পেঁয়াজ মজুদ আছে পাহাড়তলী বাজারেও। কিন্তু গত দুইদিন ধরে ক্রেতা নেই বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। খাতুনগঞ্জের আড়তদার জাবেদ ইকবাল পূর্বকোণকে জানান, গতকাল পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল মিয়ানমার ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ভারতীয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মেহেপুর ২৫ টাকা, বেলডাঙ্গা ৩০ টাকা। তিনি জানান, এক সপ্তাহ পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এরপর থেকে পচতে শুরু করে। তিনি বলেন, এসব পেঁয়াজ বাজারে গেলে দাম অনেক কমে যাবে।

একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। সারাদেশে দিনে ৩০ লাখ মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ও বাজারজাত হয়। কিন্তু করোনা আতঙ্কের পর থেকে মুরগির বাচ্চা বিক্রি এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ব্রিডারর্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও নাগা এগ্রো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল পূর্বকোণকে জানান, দেশে গার্মেন্টস শিল্পের পরেই পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থান। গ্রামভিত্তিক শিক্ষিত বেকার যুবকরা পোল্ট্রি ফার্ম করে তারা যেমন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তেমনি দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন।

বর্তমানে মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি হচ্ছেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ দুই থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। যেহেতু বিক্রি নেই, তাই উৎপাদকরা বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন। আগামীতে দেশে মুরগির সংকট দেখা দিবে। বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তা একমাস চললে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই খাত।

তিনি বলেন, মৎস্য খাতও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ মৎস্য খামারিরা মাছের খাদ্যের সংকটে পড়তে পারেন। চলমান দুর্যোগের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা অনেকখানি ভেঙে পড়েছে। তাই মৎস্য খামারিরা প্রয়োজনীয় মৎস্য খাদ্য পাবেন না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট