চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আমদানি-রপ্তানি কমছে
চট্রগ্রাম বন্দরে মজুদ বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ

চট্টগ্রাম বন্দর

আমদানি-রপ্তানি কমছে

সারোয়ার আহমদ

১৯ মার্চ, ২০২০ | ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস এসোসিয়েশন (বিকডা)’র ২২শতাংশ বর্ধিত চার্জ ও করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে। গত জানুয়ারি ও ফ্রেব্রুয়ারি মাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বন্দরের কন্টেইনার পরিবহনে। এই মাসে নেতিবাচক হার আরো বাড়তে পারে। এই নেতিবাচক কন্টেইনার পরিবহনের হারের পেছনে রয়েছে বিকডার ২২শতাংশ বর্ধিত চার্জ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব। যার কারণে কমে গেছে আমদানি-রপ্তানি। এদিকে অফডকগুলো ২২শতাংশ বর্ধিত হারে বিল করায় শিপিং এজেন্টরাও পড়ছে নানা সমস্যায়। বর্ধিত চার্জের বিল পরিশোধ জটিলতায় অফডকগুলো গত ১১মার্চ থেকে তিন বিদেশি শিপিং এজেন্টদের কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ করে দেয়। সেই তিন বিদেশি শিপিং কোম্পানির কন্টেইনারে চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপো থেকে ৩২ শতাংশ রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো। আর কন্টেইনার পরিবহন বন্ধের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে। গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ভর্তি ও খালি কন্টেইনার আমদানি হয় ১লক্ষ ৪৬হাজার ৭৭৩ টিইইউস কন্টেইনার। আর রপ্তানি হয় ১লক্ষ ৩৯হাজার ২০৬ টিইইউস কন্টেইনার। পরবর্তি ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য ভর্তি ও খালি কন্টেইনার আমদানি হয় ১লক্ষ ২৭হাজার ৫৮৮ টিইইউস কন্টেইনার। আর রপ্তানি হয় ১লক্ষ ১৪হাজার ৩৫২ টিইইউস কন্টেইনার। অর্থাৎ জানুয়ারিতে মোট আমদানি-রপ্তানি হয় ২লক্ষ ৮৫হাজার ৯৭৯ টিইইউস কন্টেনার, আর ফেব্রুয়ারিতে মোট আমদানি-রপ্তানি হয় ২ লক্ষ ৪১হাজার ৯৪০ টিইইউস কন্টেইনার। দুই মাসের ব্যবধানে কমেছে ৪৪হাজার ৩৯ টিইইউস কন্টেনার। আর চলতি মার্চে কন্টেইনার পরিবহনের কমার হার আরো বাড়বে। তবে বন্দর সূত্র জানায় এই মাসের এখনো ২২দিন বাকি আছে। এই ২২দিনে কন্টেইনার পরিবহন বেড়ে গেলে মাস শেষে কন্টেইনার পরিবহনের হার খুব একটা কম হবে না। তাছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে জানুয়ারি থেকে দুই দিন কম ছিল। সেই দুইদিনের হিসেব করলে কন্টেইনার পরিবহন কম হয়নি। বিশে^ করোনাভাইরাসের কারণে অনেক ইউরোপ আমেরিকার অনেক দামি ব্রান্ডের শপ বন্ধ রাখা হয়েছে মন্তব্য করে বিজেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম পূর্বকোণকে বলেন, বিদেশি অনেক বায়ার তাদের অর্ডার হোল্ড করে রেখেছে। অনেকে অর্ডার দিয়ে আবার ক্যানসেলও করেছে। সামনের দিনগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। যার প্রভাব ইতিমধ্যে বন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে এয়ার কার্গোতে দেশের পণ্য পরিবহন বন্ধ প্রায়। নামে মাত্র এয়ারে পণ্য যায়। এবিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস এসোসিয়েশেন (বাফা)’র সভাপতি কবির আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, আমরা বিদেশে তৈরি পোশাকের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু কাঁচামাল বা খাবারের যেমন সবজি রপ্তানির জন্য খুব প্রসিদ্ধ না। অল্প পরিমাণে মধ্য প্রাচ্যের কিছু দেশে সবজি রপ্তানি হতো। কিন্তু সৌদি আরব, ওমান, দুবাই এখন সেই অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে। ওই ধরনের পণ্য রপ্তানি শুণ্য প্রায়। দেশের করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হলে আমাদের দেশের সব পণ্য রপ্তানি বিশ্বের সব দেশ বন্ধ করে দেবে। তখন দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে।
করোনা পরিস্থিতি ও বিকডার চার্জ এর কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি নেতিবাচক থেকে আরো নেতিবাচকের দিকে যাচ্ছে। যার প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরের উপর পড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেলে বন্দর তথা দেশের অবস্থা খুব খারাপ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তবে শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ ইকবাল শিমুল বলেন, কন্টেইনার পরিবহনে বন্দরের নেতিবাচক প্রভার করোনাভাইরাসের কারণেই। কারণ জানুয়ারির ২০ তারিখ থেকে চায়নার সব অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি চলে। যার কারণে চায়নার আমদানি-রপ্তানিও বন্ধ ছিল। আর তারই প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার পরিবহনে এসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট