চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় অ্যাভিয়েশন ব্যবসায় ধস

১৫ মার্চ, ২০২০ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব পড়েছে অ্যাভিয়েশন খাতে। ইতোমধ্যে এ খাতের ব্যবসায় ধস নেমেছে।বিশ্বের অনেক দেশে এ এয়ারলাইন্স ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এশিয়ার দেশগুলোতেও। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় করোনা ছড়িয়ে পড়লেও বেশি প্রভাব ফেলেছে এশিয়ায়।
শনিবার পর্যন্ত করোনার কারণে পোল্যান্ডের পোলিস এয়ারলাইন্স পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে তাদের সব বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ ১৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এ আদেশ বহাল রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ এয়ারলাইন্স ১২০টি দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
অন্যদিকে একই কারণে ইতালিতে সব ফ্লাইট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিখ্যাত বিমান কোম্পানি এমিরেটস। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এয়ারলাইন্সটির কর্তৃপক্ষ। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ, অনেকে করোনার প্রভাবে ফ্লাইট বন্ধ ও বাতিলের পাশাপাশি ব্যবসাও গুটিয়ে নিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশে^র বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশিতে পৌঁছতে পারে। তবে অনেক এয়ারলাইন্স তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন অফার দিয়েছে। এ অফারে যাত্রী বাড়বে কিন্তু ক্ষতি পোষাবে না। অ্যাভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠা মুশকিল। তবে প্রতিটি দেশের সরকার যদি সে খাতের বিভিন্ন ফি কমিয়ে বা কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখে তবে সেটি কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। অথবা এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রণোদনাও দেওয়া যেতে পারে।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে চীন থেকে। তা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এমনকি ভারত থেকে ছড়িয়ে এখন সৌদি আরব ও কাতারেও গিয়ে ঠেকেছে। সর্বশেষ এ ভাইরাস এখন সাম্রাজ্য গড়েছে ইউরোপের ইতালিতে। করোনার প্রভাবে শুধু এশিয়ায় নয়, ইউরোপের দেশগুলোতে প্রতিদিনই কম বেশি ফ্লাইট বাতিল ও বন্ধ হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের জরিপ বলছে, করোনার প্রভাবে ফ্লাইট বাতিল ও বন্ধের ঘোষণায় এশিয়া এগিয়ে। এশিয়ায় ৩১ শতাংশ হলেও আমেরিকায় ১৯ শতাংশ, ইউকে-তে ১৭ শতাংশ ও অন্য জায়গায় ১০ শতাংশ। অবস্থা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনেক রুটের ফ্লাইট বাতিল ও বন্ধ ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলো। এশিয়ায় সিডনি-টোকিও, মেলবোর্ন-সিঙ্গাপুর, ব্রিসবন ও শিকাগো ছাড়াও বিভিন্ন রুটে প্রতিনিয়ত ফ্লাইট বাতিল, বন্ধ ও সময় বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। গত মাস থেকেই ভালো নেই অ্যাভিয়েশন খাতের চিত্র। তা প্রকট হতে শুরু করেছে চলতি মাসে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স, থাই, এয়ারবাসের যেমন যাত্রী কমেছে তেমনি ফ্লাইটও বাতিল হচ্ছে। ব্যতিক্রম হয়নি কান্তাস ও জেটস্টারের ক্ষেত্রেও। তবে শুধু অন্য মহাদেশের তুলনায় এশিয়ায় এ অবস্থা বড়ই নাজুক। এতে বিশ্ব জুড়ে ব্যবসা করা এয়ারলাইন্সগুলো এখন বেশ ক্ষতির মুখে। তারা এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন সে চিন্তায় কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। আবার কেউ কেউ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করেছেন।
বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স ও অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাভিয়েশন ব্যবসার ইতিহাসে এমন কখনোই হয়নি। হয়তো কোনো দেশে সাময়িক যাত্রা বিরতি বা বন্ধ ছিল কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা বা ধকল কতদিন চলবে তা নিয়ে চিন্তিত অনেকে। করোনার ধকল চলে গেলেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এ সময়ে পাইলট, ক্রু ও স্টাফদের বেতন, বিভিন্ন ফি বা ট্যাক্স ঠিকই দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলে গেলে তখন কিন্তু টিকেটের মূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব না। হয়তো যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ হবে কিন্তু ফ্লাইটের আসন সংখ্যা তো আর বাড়বে না। একটি দেশে যে কয়েকবার এখন যাওয়ার সিডিউল তা তো বাড়ানো সম্ভব হবে না। এসব কারণে এ ক্ষতি পূরণ করা কঠিন। তবে এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। করোনা চলাকালীন বা পরবর্তী কিছুদিন বিভিন্ন ট্যাক্স বা ফি না নিয়েও ক্ষতি কিছুটা পোষানো সম্ভব। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রুটে বন্ধ বা বাতিল হয়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর টিকেটের মূল্য বাবদ টাকা ক্রয়কারীদের ফেরত দিচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার প্রভাব দেশীয় বিভিন্ন রুটেও পড়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার ও সিলেট রুটে যাত্রী কমে গেছে। অধিকাংশ রুটের বড় বড় গ্রুপ ট্যুরগুলোও বাতিল হচ্ছে। একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত এক মাসে আমাদের দেশীয় রুটের প্রায় ২২ থেকে ২৫টি গ্রুপ ট্যুরের বুকিং ছিল। সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। অথচ এ টাকাগুলো ফেরত দিতে হবে। আয় নেই কিন্তু স্টাফদের বেতন তো ঠিকই দিতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী একটি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা বলেন, ভারতে আগামী এক মাস কোনো যাত্রী যেতে পারবে না, করোনা স্বাভাবিক হলে তাদের যাওয়ার গতি বাড়বে। কিন্তু এতে ক্ষতিপূরণ হবে না। অ্যাভিয়েশন খাতে এ ধরনের দুর্যোগ আসতে পারে। তবে সেটি পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যানাটিক্যাল চার্জগুলো না নেওয়া হলে কিছুটা উত্তরণের সুযোগ থাকে। তবে দীর্ঘ সময়ে করোনার প্রভাব থাকলে অ্যাভিয়েশন খাতে বড় ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, সামনে ঈদ আসছে। কিন্তু এ ঈদুল ফিতরে বিমানে লোকজন যাবেন কি না তা নিয়েও তারা চিন্তিত। এ ছাড়াও চলতি মাসে দুটি থাকলেও কোনো রুটে গ্রাহকের সাড়া নেই। এ ছাড়াও করোনার আগে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও এখন তা কমিয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে এ পরিস্থিতি কত তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠা সম্ভব সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বিমানের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যাভিয়েশন খাতের অবস্থা বড়ই নাজুক। রাষ্ট্রীয় বিমানের অবস্থা আরও ভয়াবহ। করোনার আতঙ্কে অধিকাংশ রুটের যাত্রী কমেছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াগামী যাত্রী অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। এতে চলতি বছর বিমান অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। যে টার্গেট নিয়ে মাঠে নামা হয়েছিল, তা এবার পূরণ করাই কঠিন হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা তাহেরা খন্দকারের ফোনে পাওয়া সম্ভব হয়নি। ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, করোনায় যে ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে তা সহজে কাটিয়ে উঠা সম্ভব না। তবে সরকারের একমাত্র প্রণোদনাই এ ক্ষতিকে কিছুটা পুষিয়ে দিতে পারে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) সোহেল মজিদ বলেন, করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অ্যাভিয়েশন খাতে। এ ব্যবসার অবস্থা তেমন ভালো না। গত মাসখানেক থেকেই ভালো যাচ্ছে না। করোনার প্রভাবে অ্যাভিয়েশন ব্যবসায় ফ্লাইট বাতিল ও বন্ধ একটি অশনিসঙ্কেত। বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরাও করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিদিনই টিকেট ক্যানসেল হচ্ছে। এতে এয়ারলাইন্সগুলো বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ছে।
হিমালয় এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, এশিয়ার মধ্যে শুধু নেপাল রুটেই যাত্রী যাতায়াত করছে। বাকি সব রুটের অবস্থা খুবই নাজুক।

তথ্যসূত্র/সময়ের আলো

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট