চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ: ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের দাবি, দু-এক দিনেই বেচাকেনা ৪০ শতাংশ কমে গেছে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৫ মার্চ, ২০২০ | ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধস নেমেছে। গত কয়েকদিনের বেচাকেনার সূচক অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের দাবি, দু-এক দিনেই বেচাকেনা ৪০ শতাংশ কমে গেছে। দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দামও অনেকটা কমে গেছে।
গতকাল (শনিবার) বাণিজ্যপাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ ভোগ্যপণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে পণ্য উঠা-নামানো চলছে। রমজানের জন্য ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানায়, রোজার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বেচাকেনা কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ধস নেমেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে রোজার আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল চলে আসছে। চলতি বছরও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ছোলা, চিনি, সয়াবিন, পাম তেল, ডাল, চাল, মটরসহ অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। গত সপ্তাহেও দামবৃদ্ধির সূচক ঊর্ধ্বগতিতে ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করে বেচাকেনায় ধস নেমেছে। ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, রমজানের জন্য পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। অনেক পণ্য ইতিমধ্যেই খালাস করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পৌঁছে গেছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও অনেক পণ্য। দ্রুতসময়ের মধ্যে এসব পণ্য দেশে আনার চেষ্টায় রয়েছেন আমদানিকারকেরা। কারণ করোনার কারণে বিশ্বের অনেক দেশ আমদানি-রপ্তানি সীমিত করে দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি তা দেশে আনতে না পারে, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আমদানিকারক, ট্রেডিং ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। তার প্রভাব পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। কয়েক প্রকারের ভোগ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এলাচ, সয়াবিন, পাম তেল, ছোলা, ডালের দাম দুই-তিন মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিশেষ করে রোজার প্রধান অনুষঙ্গ পাম, সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা, ডালের দাম গত ডিসেম্বরের পর থেকে অস্থির ছিল। চিনি কেজিপ্রতি ৫৪ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ৭০ টাকায় ঠেকেছিল। খেশারি ৪৫ থেকে পৌঁছেছে ৯০ টাকায়। বেড়েছিল ছোলার দামও।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিনির দাম তিন মাস আগে মণপ্রতি পৌনে তিনশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে চিনি বিক্রি হয়েছিল মণপ্রতি ২১২০ টাকা থেকে ২১৩০ টাকা পর্যন্ত। গত মাসে তা ২২৯০-২৩শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বিক্রি হয়েছে ২১৪০-২১৭০ টাকা দরে।
গত মাসে পাম তেল মণপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ২৭৪৫-২৭৭০ টাকা দরে। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছিল ২৫ শ টাকা। নভেম্বরে তা বিক্রি হয়েছিল ২৩ শ টাকা। গতকাল পাম ওয়েল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২২৭০ টাকা দরে। তবে সয়াবিন তেলের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৩১২০ টাকা দরে।
রমজানের জন্য আমদানি করা ছোলার দাম বেশি কমেছে। গত বছরের নভেম্বরে উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হয়েছিল ২১শ টাকা দরে। ক্রমান্বয়ে বেড়ে গত মাসে বিক্রি হয়েছিল ২২৭০ টাকা দরে। গতকাল তা কমে বিক্রি হচ্ছে ২০৫০ থেকে ২০৭০ টাকা দরে। তবে মসুর ও খেশারি ডালের দাম কিছুটা কমেছে।
পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে। তবে করোনার কারণে নয়, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির উদ্যোগ ও বাজারে দেশি পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় দামের প্রভাব পড়েছে বলে জানান আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল মিয়ানমারের আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা দরে। গত বুধ-বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ৫৫-৬০ টাকায়। মেহেরপুরের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকায়। কয়েক দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৮ টাকা দরে। করোনার কারণে চায়না রসুনের দাম ১৪৫-১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। তবে আদার দাম কিছুটা বেড়েছে। চায়না থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় ৮৫-৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। মিয়ারমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে।
আড়তদার জাবেদ ইকবাল বলেন, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার থেকে বেচাকেনা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, বাজার নিম্নমুখী হওয়ার কারণে বেচাকেনা কমে গেছে।
দাম কমে যাওয়া ও বেচাকেনা কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। তার কিছুটা প্রভাব এখানেও পড়ছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে নীতি-নির্ধারণ করতে হবে। যাতে ভোগ্যপণ্যের উপর কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে। এবং আমদানি-রপ্তানিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে।
খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং ব্যবসায়ী মের্সাস আমান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজি আমান উল্লাহ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বেচাকেনা অনেকটা কমে গেছে। শেয়ার বাজারের মতো কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের দামে হঠাৎ ছন্দপতন হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীকে বড় ধরনের ক্ষতি গুণতে হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট