চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

করোনা আতঙ্কে শ্রমবাজার-রপ্তানি পর্যটন ঝুঁকিতে

অনলাইন ডেস্ক

৬ মার্চ, ২০২০ | ৪:৩৪ অপরাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমিত দেশ চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও দেশে এখনো করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত একজন রোগীও পাওয়া যায়নি। চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকেই দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপর সংক্রমিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসার পর শ্রমবাজার পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এছাড়া জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে।

এদিকে বুধবার (৪ মার্চ) ‘গ্লোবাল ট্রেড ইম্প্যাক্ট অব দ্য করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) এপিডেমিক’ শিরোনামে আঙ্কটাডের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেপ এন্ড কমোডিটিস ডিভিশন থেকে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের মধ্যবর্তী পণ্য রপ্তানি দুই শতাংশ কমলে যে ২০টি দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ তার একটি। এ কারণে বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্প খাত, কাঠ ও আসবাব এবং চামড়াশিল্পে ক্ষতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ২৫টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এ অবস্থায় বাংলাদেশে প্রতিদিনই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছে আইইডিসিআর। বুধবার সংস্থাটি জানায়, যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে এখন উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন স্তরে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের রপ্তানি আয়ের ধস অব্যাহত রয়েছে। বছরের আট মাসেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম আট মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৬৪১ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছর একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগবে। এ অবস্থায় সরকারের সহায়তা জরুরি। বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে চারটি দেশকে করোনাভাইরাসের হট স্পট বলে চিহ্নিত করেছে, সেসব দেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশগুলো হলো ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ইরান। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৪১ হাজার ৬০৬ জন। তবে শিক্ষার্থী ও অন্যান্য বাংলাদেশিসহ এ সংখ্যা ৫৫ হাজারের ওপরে। জাপানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসাবে দেশটিতে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে ৫৫ হাজার ৫২০ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইতালি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৫৭ মিলিয়ন ডলার, জাপান থেকে ৪৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এসেছে ১১২ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার পণ্য রপ্তানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনোটাই স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের আট মাসে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ আট মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। সে হিসাবে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা কোনোটাই পূরণ হয়নি। জানুয়ারিতে মোট রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ১ দশমিক ৮০ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ অর্থবছরের শুরু থেকে বলে আসছি তৈরি পোশাকের ব্যবসা কম। বিশ্ববাজারে পোশাকের ব্যবসা কমছে। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমরা যতটুকু পিছিয়ে আছি আমাদের ব্যবসা ততটুকু কমেছে। কিন্তু আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, আগের তুলনায় আমাদের ব্যবসাও ৫ শতাংশ কমে গেছে। দিন দিন খরচ বাড়ছে। সব মিলিয়ে পোশাক খাত বড় চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।

তথ্যসূত্র: দেশরূপান্তর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট