চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

অনিরাপত্তায় সাধারণের সঞ্চয়

অনলাইন ডেস্ক

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:০৩ অপরাহ্ণ

গ্রাম-গঞ্জের সঞ্চয়কারী ও ছোট চাকরিজীবীদের ভরসার ক্ষেত্র ‘ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের’ সুদের হার কমিয়ে অর্ধেকে নামানো হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। আর জাতীয় ‘সঞ্চয়পত্র’-এর সুদহার না কমালেও ১ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি পরিপত্র জারি করেছে। এটির মাধ্যমে ডাকঘরে যে সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকের সুদের হার সরকারি ব্যাংকের সুদের হারের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সরকারের যে সঞ্চয়পত্র সেটির সুদের হার কমানো হয়নি, এটি যা ছিল তাই আছে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সঞ্চয়ের ঘরে এভাবে সরকারের আঘাতের কারণে ব্যাংক বা ডাকঘরে টাকা রেখে সঞ্চয়কারীরা এতদিনে যে মুনাফা পেতেন, এখন তা পাওয়ার পথ সংকুচিত হল। সঞ্চয় মানুষের নিরাপত্তা বহন করে। কিন্তু সেটি এখন সাধারণ শ্রেণির মধ্যে একটি উৎকন্ঠা তৈরি করবে সাথে সাথে সাধারণের বিনিয়োগ অনিরাপদ হয়ে উঠবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর আয়করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যাংকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিশ্চিত করতে গিয়ে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামানোর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশের মতো। অর্থাৎ, এখন যে পণ্যের দাম ১০০ টাকা, এক বছর পর ওই পণ্য কিনতে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা লাগবে। আর ব্যাংকে বা ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে এখন ১০০ টাকা আমানত রাখলে এক বছর পর ১০৫ টাকা থেকে ১০৬ টাকা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, কষ্টের সঞ্চয় ব্যাংক বা ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সব মানুষের সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংকে নেওয়ার উদ্দেশে বেশি সুদের স্কিমগুলোর মুনাফার হার কমানো হচ্ছে। এতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা কমে গিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। এখন দেশে জিডিপির ৩৪ শতাংশ বিনিয়োগ চাহিদার বিপরীতে সঞ্চয়ের হার ২৭-২৮ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছে।  সঞ্চয় কমলে বিনিয়োগ সংকট আরও বাড়বে। এমনিতেই বাংলাদেশে সঞ্চয়ের অর্থ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ খুবই কম।  সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক, শেয়ারবাজারের বাইরে বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বিনিয়োগ করে সঞ্চয়কারীরা বিভিন্ন সময় প্রতারিত হয়েছে। ফলে একই সঙ্গে ব্যাংক ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় বিনিয়োগের দুটি ক্ষেত্র বাকি থাকছে।  এর একটি সঞ্চয়পত্র, অন্যটি শেয়ারবাজার। সঞ্চয়পত্রে নিরুৎসাহিত করায় সে ক্ষেত্রটি সংকুচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, শেয়ারবাজারও স্থিতিশীল নয়, সেখানে বিনিয়োগ করে বারবার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়-সম্বল হারাতে হয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় করবে কীভাবে আর বিনিয়োগ করবে কোথায়?

 

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট