চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলবায়ু পরিবর্তন : বদলে যাবে খাদ্যাভ্যাস

নাসরিন আকতার

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ছোলা থেকে তৈরি হবে দুধ, বার্গার হবে মাংস ছাড়াই গরুর মাংস তৈরি হবে বিজ্ঞানাগারে, প্রয়োজন পড়বে না গরু কিংবা কসাইয়ের দোকান। পান্তা খামির থেকে তৈরি হবে হ্যামবার্গার এবং এতে থাকবে না এক ছটাকও মাংস। উড়ন্ত শূককীট থেকে তৈরি হবে টুনা মাছের মতো উচ্চ ক্যালসিয়াম সম্পন্ন খাবার!

(গত সংখ্যার পর)
খাদ্য তালিকায় পোকামাকড়

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সি লেটুসকে মেনে নেওয়া খুব কঠিন নয়। কিন্তু পোকামাকড় বা উড়ে বেড়ানো কীটপতঙ্গকে খাদ্য হিসেবে মেনে নেওয়া সহজ নয়। অনেক বছর ধরেই বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক কারণে ভবিষ্যতে আমরা যে প্রোটিন গ্রহণ করব সেগুলোর কিছুটা আসবে পোকামাকড় থেকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, ভোজ্য পোকামাকড়ে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যামিনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ও ফলিক এসিড থাকে। ঝিঁঝিঁ পোকা, ফড়িং ও গুবরে পোকায় অনেক বেশি ক্যালসিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে লাল মাংসের চেয়ে বেশি। পোকামাকড় থেকে পুষ্টি গ্রহণের পরিবেশগত সুবিধাও অনেক। কীট-পতঙ্গ চাষের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না এবং দ্রুতই বংশবৃদ্ধি ঘটে। গরু ও ছাগলের চাইলে পালনও সহজ। এছাড়া এগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে না। পোকামাকড় আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার খাওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমে এগুলোকে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে মানসিক বাধা রয়েছে।

ফ্লাইং স্পার্ক নামের একটি ইসরায়েলি কোম্পানি পোক-মাকড় ও কীট-পতঙ্গ থেকে প্রোটিন তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কোম্পানির বিজ্ঞানাগারে কয়েক লাখ মাছি পালন করা হচ্ছে। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার এরান গ্রোনিখ মনে করেন, প্রোটিন উৎপাদনের এটিই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা।
সুপারফুড সবুজ শেওলা
পোকামাকড় ও সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকলেও অনেকেই সুপারফুড হিসেবে সবুজ শেওলাকে প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিবেচনা করতে চান। এতে রয়েছে ৪৫ শতাংশ পরিপূর্ণ প্রোটিন। যার অর্থ হলো প্রতিদিন একজনের যে অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন হয় তা পুরোমাত্রায় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে আয়রন, ওমেগা ৩ ও বি-১২ ভিটামিন। যা শুধু প্রাণির মধ্যে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ শেওলার আয়রন ও প্রোটিন খুব কার্যকরভাবে শরীর গ্রহণ করে এবং তা চিনির ভারসাম্য বজায় রাখে নাটকীয়ভাবে। সংক্ষেপে, এটি হতে পারে মাংসের সুলভ বিকল্প। এটি পুকুরে জন্মায় অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে। প্রতি ৭২ ঘণ্টায় পরিমাণ দ্বিগুণ হয়। এর কোনও গন্ধ বা স্বাদ নেই এবং সম্পূরক খাদ্য হিসেবে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবুজ শেওলা বিক্রি করে ইসরায়েলি কোম্পানি হিনোম্যান।

১ চামচে ৫০ কেজি চিনির মিষ্টি
পরিবেশ বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য উৎপাদনের বিকল্পের উদাহরণ সবুজ শেওলা। কিন্তু উদ্ভিদে পাওয়া প্রোটিনকে ভিত্তি ধরে একটি মিষ্টিকারক উৎপাদন করেছে আমায় প্রোটিন নামের কোম্পানি। চিনির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এটির এবং ১০ হাজারগুণ বেশি মিষ্টি। অন্যভাবে বললে, এটি মাত্র ১ চা-চামচ পরিমাণ যে মিষ্টি পাওয়া যায় সেজন্য ৫০ কেজি চিনি প্রয়োজন হবে।

এক বাক্সে পুরো রান্নাঘর
ভবিষ্যতের ফুড-টেক সাম্রাজ্য দখল করে নিতে অনেকটাই এগিয়ে আছে ইসরায়েলি বিভিন্ন কোম্পানি। তাদের আরেকটি অভিনব উদ্ভাবন হলো ‘জিনি’। যেটিকে কোম্পানিটি ‘এক বাক্সে একটি রান্নাঘর’ বলে বাজারজাত করছে। এতে প্রচলিত রান্না ও বেকিংয়ের বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য) [সূত্র : সূত্র: হারেৎজ]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট