চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শারদীয় রথে চড়ে এলো শরৎ

ডেইজী মউদুদ

১৬ আগস্ট, ২০২০ | ৫:২৮ অপরাহ্ণ

গত কয়েকমাস ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার ভয়াল তাণ্ডব। এখনো এই তাণ্ডবে সবচেয়ে অসহায় ও বিপর্যস্ত মানুষ। গত পাঁচ মাসে এ মহামারীতে মানুষ মারা গেছে পাখির মতো। বিশ্বের ধনী দেশগুলো আপ্রাণ চেষ্টা  করেও প্রতিরোধ করতে পারেনি এ রোগকে। অবশেষে প্রাণভয়ে মানুষ গৃহবন্দী হলো। আর এ সুযোগে প্রকৃতি তার উদার হস্ত যেন আবার নতুন করে প্রসারিত করে দিল। সত্যিকারের শারদীয় রূপ যেন এবার অনেক  আগে থেকেই দেখা দিল প্রকৃতিতে। গাছে গাছে  ফুল ফুটলো, শাখে শাখে পাখির কলকাকলি বেড়ে গেল। আকাশ সুনীল হলো, বাতাস নির্মল হলো, সাগরে দূষণ কমায় ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে এলো ডলফিনেরা।

আজ পহেলা ভাদ্র। এই করোনাকালে মানুষের কষ্ট আর দুঃখকে সাথে নিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে  প্রকৃতিতে  এসেছে শরৎকাল। বর্ষার  অঝোর বর্ষণ, বিজলি আর বজ্রপাতের গগণবিদারী নাদ, পথঘাট পিচ্ছিল, কর্দমাক্ত, ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহ ছেড়ে প্রকৃতিতে শরৎ আসে শান্ত, স্নিগ্ধ আর কোমলতার রূপ নিয়ে, যেখানে নেই কোনো মলিনতা, আছে নির্মল আনন্দ আর অনাবিল উচ্ছ্বাস।

‘আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা রে ভাই  লুকোচুরির খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা।’

শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না এমন  মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাশফুল নদীতীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাসে প্রকৃতি হয়ে উঠে মায়াময়। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির  ফোঁটা যেন আনন্দ-বারি। বৃষ্টি শেষে আবারো রোদ। দিগন্ত জুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু। কবিগুরু বলেন, ‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে, হে মাতা বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ ঝলিছে অমল শোভাতে।’ শরৎকালে মানব মন উৎসবের নেশায় মেতে উঠে। মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি কৃষকের মনে জাগায় আসন্ন নবান্নের প্রতীক্ষা আলোক-শিশিরে-কুসুমে-ধান্যে ভরা বাংলার প্রকৃতির জন্য।

কবি জীবনানন্দ দাশ  ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতায় লিখেছিলেন  ‘এখানে আকাশ নীল- নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে হিম শাদা- রং তার আশ্বিনের আলোর মতন।’ প্রকৃতির এই রূপসুধা আহরণ করতে শত দুঃখ কষ্টের ভেতরে ও মানুষ তাকায় আকাশপানে। ভোরের শিশিরভেজা দুর্বা মাড়িয়ে, সকালের সোনাঝরা রোদ আর আকাশে শাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে হয়তোবা মানবমন হারিয়ে যায় শরতের প্রাকৃতিক সুষমার রাজ্যে। কিন্তু নিয়তি আজ বড়ই নির্মম। মহামারীতে মানুষ আজ বিপর্যস্ত। মহামারীর ধকল মোকাবেলা করা এখন প্রধান কাজ। অসহায় মানবগোষ্ঠী এখন মুক্তি চায় করোনার নিষ্ঠুর থাবা থেকে।

পূর্বকোণ/আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট