চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

ছোট হয়ে আসছে বাঘের জগৎ

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

ছোট হয়ে আসছে বাঘের জগৎ

দেশে ২০ বছরে ৩৮ বাঘ হত্যা

ডা. মো. শাহাদাত হোসেন শুভ

২৯ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন, যা ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। মোট আয়তনের ষাট ভাগ বাংলাদেশের অংশে। আর সুন্দরবনেই শুধু বাস করে আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনবিভাগের সমীক্ষা মোতাবেক ২০০৪ সালে মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০ আর সর্বশেষ ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১৪ টি। এরমধ্যে ২০১৫ সালে আরও কমে হয়েছিল ১০৬ টি। অর্থাৎ শেষ গণনায় ৮ টি বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে সুন্দরবনের কম আয়তন নিয়েও ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ভারতের সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৮১ টি, তা বেড়ে ২০১৭ সালে হয়েছে ৮৭ টি । আর সর্বশেষ ২০১৯ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের সুন্দরবনে বাঘ ৯৬ টি। অর্থাৎ বাঘ বৃদ্ধির হার ভারতের অংশে বেশি যদিও তাদের সুন্দরবনের অংশ কম। বাঘ বৃদ্ধিতে ভারত ছাড়াও রয়েছে নেপাল, রাশিয়া ও ভুটান।
ভারতের এই দ্রুত বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ নিরুপণ করলে দেখা যায়, প্রথমেই তারা সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও বনের অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের বনের বাইরে নিয়ে পুনর্বাসন করেছে। এছাড়াও বন ঘেঁষে অবস্থিত মানুষদের আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছে। ফলে বাঘ আর মানুষের কনফ্লিক্ট প্রায় নেই বলা চলে। এর বাইরে ভারতের সুন্দরবন এর যেসকল জায়গায় বাঘের বিচরণ বেশি সেখানে সিসিটিভির মাধ্যমে জনগণের বিচরণ পর্যবেক্ষণ করে তা রোধ করছে। ফলে ভারতে যেমন বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বেড়েছে ভারতে সুন্দরবনের আয়তন।
বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে কিছুদিন পূর্বেও নিয়মিত বন্দুকযুদ্ধ ও বনের অভ্যন্তরে অপহরণ অহরহ ঘটতো। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা অনেকটা কমে এলেও এখনো অনেক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এছাড়াও কাঠ আহরণ, মধু আহরণ, গোলপাতা সংগ্রহ, মাছ ধরার জন্য মানুষজন বনে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষ ও বাঘের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়ছে আর বাঘও মারা পড়ছে। এছাড়াও প্রচুর হরিণ শিকার ও অন্য বন্যপ্রাণী হত্যার কারণে বাঘের খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে খাবারের অভাবে অনেক সময় বাঘ সুন্দরবনের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে গৃহপালিত পশুদের ওপর হামলা করছে। ২০ বছরে প্রায় ৩৮ টি বাঘ হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের মধ্যে ইনব্রিডিং হবার সম্ভাবনা বেশি বাড়ছে। বাঘ রিইনট্রডাকশন করে বাঘের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি করা যায় তেমন জিনগত বৈচিত্র্য আনয়ন সম্ভব হয়।
এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সাফারি ও চিড়িয়াখানাগুলোর মধ্যে বাঘ বিনিময়। এতে প্রজননের মাধ্যমে বিভিন্ন চিড়িয়াখানা-সাফারিতে বাঘের জিনগত বৈচিত্র্য আসবে। সেখান থেকে বাছাই করা কিছু ৬ মাস বয়সী বাঘ শাবক দিয়ে রিইনট্রডাকশন প্রকল্প শুরু করা যায়। এরপর, সুন্দরবনের আশেপাশে বাঘের ব্রিডিং সেন্টার তৈরি করা। যাতে সুন্দরবনের কাছাকাছি পরিবেশ পায়। বাঘ বিশেষজ্ঞরা এই বাঘ শাবকদের সুন্দরবনের উপযোগী হিসেবে তৈরি করবে এবং শিকার ধরার উপযোগী করবে। এই শাবকেরা বড় হয়ে প্রজননের মাধ্যমে যে বাচ্চা দিবে তাদের পরে বনে ছাড়া হবে। এর মাধ্যমে ৫ বছরে অনেক বাঘ সুন্দরবনে ছাড়া সম্ভব।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল অংশ টিকে আছে সুন্দরবনের জন্য। আর সুন্দরবন টিকে আছে এই বেঙ্গল টাইগার এর জন্য। সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান ও টিকে থাকার জন্য বেঙ্গল টাইগার এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট