চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

পরিবেশ দূষণ এড়াতে ইট বাদ দিচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ মার্চ, ২০২০ | ৮:২০ অপরাহ্ণ

২০২৫ সালের পর সরকারি কোনো কাজে ইট ব্যবহার করা যাবে না। পরিবেশ দূষণ এড়াতে ইটের ব্যবহার থেকে সরে আসছে সরকার।  এ সময়ের মধ্যে সরকারি নির্মাণকাজে ইটের স্থান দখল করবে ব্লক । সময়াবদ্ধ এ পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করে গত ২৫ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাহমুদ হাসান গতকাল সোমবার  বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে ইট ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ । আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে ইট বা ইটভাটা । ওই সময় পুরোপুরি ব্লক ব্যবহার করতে হবে। একবারে বন্ধ না করে ধাপে ধাপে ইট থেকে সরে আসা হচ্ছে।’ সরকারি কাজে ইট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও বেসরকারি কাজে নিষিদ্ধ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান বলেন, ‘সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ হলে বেসরকারি কাজে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য আলাদা করে কোনো আদেশের প্রয়োজন নেই।’

ব্লক তৈরি করতে কোনো আগুন ধরাতে হয় না। বালি ও কেমিক্যালের মাধ্যমে কমপ্রেশার দিয়ে ব্লক তৈরি করা হয়। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্লক তৈরি করছে। ব্লক নির্ধারিত মেশিনের মাধ্যমে শুকানো হয়। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হওয়ায় দূষণ অনেকাংশেই কম হয়। ইটের বদলে ব্লক ব্যবহার উৎসাহিত করতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৯ এ বছর সংসদে পাস হয়।

ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রজ্ঞাপন জারি করেন। সেখানে বলা হয়, ইট প্রস্তুতে মাটির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানোর জন্য সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ভবনের দেয়াল, সীমানা প্রাচীর, হেরিং বোন বন্ড রাস্তা এবং গ্রাম সড়ক টাইপ ‘বি’র ক্ষেত্রে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহারে কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করা হলো। তবে সড়ক, মহাসড়কের বেইজ ও সাব-বেইজ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কারে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না বলেও জানানো হয় ওই প্রজ্ঞাপনে।

দেশে কত ইটভাটা রয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি। তবে তারা খসড়া হিসাব কষে জানিয়েছেন, দেশের ৬৪ জেলায় বর্তমানে ৮ হাজার ৩৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে ৫ হাজার ২২৫টির। ছাড়পত্র নেই ২ হাজার ৫১৩টি ইটভাটার। এছাড়া কিছু ইটভাটা রয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলোকে বৈধ-অবৈধ তালিকায় রাখা হয়নি। এসব ভাটার মধ্যে পরিবেশসম্মত চিমনি ব্যবহারে করে ইট তৈরি করছে ৭২ শতাংশ ইটভাটা। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও সংলগ্ন জেলাগুলোয় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এলাকায় যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে বা পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে চলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সেগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

প্রচলিত পদ্ধতিতে ইটভাটায় পোড়া ইটের উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার পরিবেশবিষয়ক সংগঠনগুলো।

 

 

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট