চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পরিবেশে ক্ষতিকর আফ্রিকান জেব্রা সিক্লিড মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১০:১৯ অপরাহ্ণ

দেশে মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয়ে আফ্রিকান জেব্রা সিক্লিড মাছ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে পরিবেশের জন্য ভীতিকর। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী এর দুটি নমুনা পতেঙ্গার এক জেলের নিকট থেকে সংগ্রহ করেন।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখের আসন্ন বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শনের জন্য “একোয়ারিয়াম ফিস হিসাবে দেশিয় মাছ প্রচলন”, “জীববৈচিত্র্য অনুসন্ধান প্রকল্প”, এবং “সামুদ্রিক মৎস্যবৈচিত্র্য অনুসন্ধান ও স্পিসিস প্রোফাইল তৈরি” প্রকল্পসমূহের প্রস্তুতি ও নমুনা সংগ্রহ চলছিল। বিভাগের ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী শতরুপা সুশীল, মোহাম্মদ রিয়াদ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শুভ’র একোয়ারিয়াম ফিস হিসাবে দেশিয় মাছ প্রচলন প্রকল্পের নমুনা সংগ্রহ অভিযানে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় এই বিদেশি একোয়ারিয়াম মাছটির সন্ধান পাওয়া যায়। দেশিয় রেকর্ডে প্রাকৃতিক জলাশয়ে নতুন এই বহিরাগত মিঠা পানির মাছটি সনাক্ত করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আরশাদ-উল-আলম।

মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Heterotilapia buttikoferi (Hubrecht, 1881)। পার্চিফর্মিস বর্গভুক্ত সিক্লিডি পরিবারের এই নবীন বয়সী মাছটির দেহ আয়তাকার ও পার্শ্বীয়ভাবে বেশ চাপা, গায়ে আটটি কালচে খাড়া ব্যান্ড আছে। প্রথম ব্যান্ডটি চোখ বরাবর মাথার উপর থেকে নীচের দিকে নেমে গেছে। শেষ দুটি ব্যান্ড লেজের গোড়ায় অবস্থিত। গাঢ় ব্যান্ডসমূহ অন্তবর্তী অংশের চেয়ে প্রশস্ত এবং পৃষ্ঠপাখনায় ও পায়ুপাখনায় বিস্তৃত। পুচ্ছপাখনায় একটি সরু অর্ধচন্দ্রাকার ব্যান্ড আছে। পুচ্ছপাখনার প্রান্ত সমান। বক্ষপাখনা বর্ণহীন। সিক্লিড পরিবারের বৈশিষ্ট্যসূচক চরিত্র একজোড়া নাসাছিদ্র দেখা যায়। পৃষ্ঠপাখনা সংযুক্ত। মুখ কিছুটা সংকোচন-প্রসারণক্ষম। চোখ তুলনামূলক বড়।

বিভিন্ন প্রকাশনার রেকর্ডে জানা যায় কালো ডোরাসমূহ তরুণ বয়সে সুস্পষ্ট থাকে, বয়স বাড়ার সাথে ডোরাগুলি ফিকে হয়ে আসে। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৪০ সেমি পর্যন্ত রেকর্ড রয়েছে। অনেক অ্যাকুয়ারিস্ট এই মাছগুলি রাখতে পছন্দ করেন কারণ এগুলি খুব বুদ্ধিমান এবং আকর্ষণীয আচরণ করে। বর্ণবিন্যাস একই হওয়ায় ও অন্য কোন দৃশ্যমান পার্থক্য না থাকায় স্পনিং এর সময় ব্যাতিত স্ত্রী পুরুষ আলাদাভাবে চেনা যায় না। এরা সর্বভূক, খাবারের পছন্দ বেশ বিস্তৃত। জেব্রা তেলাপিয়া আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য পরিচিত। কিশোর হিসাবে তারা আক্রমণাত্মক নয়, তবে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে তাদের আক্রমণাত্মক আচরণ বৃদ্ধি পায়।

মাছটির প্রাকৃতিক আবাস পশ্চিম আফ্রিকার গিনি-বিসাউ (গেবা এবং করুবল নদী) থেকে পশ্চিম লাইবেরিয়া (সেন্ট জন নদী) পর্যন্ত। বহিরাগত প্রজাতি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডা, হংকং এবং থাইল্যান্ডে এর উপস্থিতির রিপোর্ট পাওয়া যায়।

মাছটি চট্টগ্রামের বিভিন্ন অ্যাকোয়ারিয়াম ফিসের দোকানে পাওয়া যায়। পরিবেশে ছড়িয়ে না পড়ার জন্য আকুয়ারিস্টদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আগ্রাসি ও সর্বভূক প্রকৃতির এই মাছটি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশীয় জলজ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সরকারি সিটি কলেজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মিউজিয়ামে মাছটি সংরক্ষিত আছে এবং আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কলেজের বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শন করা হবে।
উল্লেখ্য ড. আরশাদ ইতোপূর্বে দেশীয় রেকর্ডে একাধিক মাছ যুক্ত করেন, এর মধ্যে শিংওয়ালা কার্প (Schismatorynchos nukta) উল্লেখযোগ্য। পার্বত্য সাঙ্গু নদীর রেমাক্রি অঞ্চল থেকে ড. আরশাদ বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই কার্প মাছটি অন্য দুটি সমগণভূক্ত প্রজাতিসহ সংগ্রহ করেন। Schismatorynchos nukta ভারতের ওয়েস্টার্ন ঘাট বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট ও কৃষ্ণা নদীর উচ্চভূমির এন্ডেমিক প্রজাতি হিসাবে বিবেচিত।

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট