চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনিশ্চয়তার মধ্যেও থেমে নেই শিশু পার্কের আধুনিকায়ন কাজ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

সার্কিট হাউসের সামনের চট্টগ্রাম শিশু পার্কটি স্থানান্তর জটিল হতে পারে। অন্য জায়গায় এটি স্থানান্তর হলে লাভজনক হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম শিশু পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। তবে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুরাহা হলে তার কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, অনিশ্চয়তার মধ্যেও বন্ধ নেই পার্ক আধুনিকরনের কাজ। ভেতর ও বাইরে নব সাজে সাজানো হচ্ছে শিশু পার্কটি। প্রবেশ মুখেই বসানো হয়েছে পানির ঝর্ণা। এরমধ্যে শিশুদের তিনটি নতুন ও আধুনিক রাইড স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৩টি রাইডার রয়েছে। নতুন করে একটি একোরিয়াম স্থাপনের কাজ চলছে। উজ্জ্বল রঙ্গে রাঙানো হচ্ছে পার্কের দেয়ালও।
ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লি. এর এমডি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে ১৫ বছরের জন্য নতুন চুক্তি হয়েছে। চুক্তির ভিত্তিতেই পার্কের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করি। ভেতরে একটি একোরিয়াম তৈরিসহ উন্নয়নমূলক কাজের প্রায় ২৪ কোটি টাকা এরমধ্যে খরচ হয়েছে। আরো ৪০ কোটি টাকার রাইড বন্দরে অপেক্ষমান। এগুলো চীন থেকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বন্দর বন্ধের আগে এসেছে। পরে আমাদের বন্দরও বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে এগুলো পাঁচমাসের বেশি সময় বন্দরে আটকা পড়ে আছে। যেগুলো এখন আনতে হবে। কারণ সেখানে ২৮ কন্টেইনার রাইডার দীর্ঘদিন থাকায় অনেক টাকা খরচ আসছে। কিন্তু বর্তমান চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন পার্কটি স্থানান্তরের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন। সিটি করপোরেশন চাইলেই চুক্তি বাতিল করতে পারে। কিন্তু নতুন কোনো জায়গায় আমি আবার বিনিয়োগ করবো কিনা তা এখনি বলতে পারছি না। কারণ নতুন কোথাও বিনিয়োগ করলে লাভ-লোকসানের বিষয় আছে। তাই পার্ক স্থানাস্তর করলে নতুন জায়গায় করবো কিনা এখনি বলতে পারছি না’। যদিও তিনি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সাথে বৈঠকে এমন স্মৃতি বিজড়িত একটি জায়গাকে রক্ষায় ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের সুরাহা হলে কোনো আপত্তি নেই’।
পার্কটি স্থানান্তরের বিষয়ে ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লি. এর জিএম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন কিছু শর্ত দিয়েছেন। নতুনভাবে মাসিক রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। চুক্তির আগে সিটি করপোরেশনকে পার্ক কর্তৃপক্ষ মাসিক ৭৫ হাজার টাকা রেভিনিউ দিত। কিন্তু নতুন চুক্তিতে এটি বৃদ্ধি করে দেড়লাখ টাকা রাজস্ব দিতে হচ্ছে এবং প্রতি পাঁচ বছর পরপর শতকরা ১৫ ভাগ বাড়িয়ে রাজস্ব দিতে হবে। পার্কটি শিশুদের জন্য আধুনিকরণ করতে হবে। টিকেটের মূল্য সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এমন শর্তের ভিত্তিতে ১৫ বছরের জন্য নতুন করে চুক্তি করা হয়। আমরা সেই চুক্তির ভিত্তিতেই ১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে পার্ক উন্নয়ন ও আধুনিকরণের কাজ শুরু করি। এখন এক বছর যেতে না যেতেই এমন জটিলতা শুরু হয়েছে’।
চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে সার্কিট হাউসের সামনে থেকে পার্কটি সরানো হবে। ইতোমধ্যে স্থানান্তরের জন্য কয়েকটি জায়গাও দেখা হয়েছে। এটি একাত্তরের স্মৃতি বহন করে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঐতিহাসিক এই স্থান রক্ষায় সম্মতি দিয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের মন্ত্রীরাও এখানে শিশু পার্ক চান না। এখানে শিশুপার্ক নয়, শিশুদের খেলার মাঠ হবে। যেহেতু আমরা একটি চুক্তিতে আছি তাই এটি অবৈধ নয়। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি না হয় মত অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হবে’।
এদিকে এলাকার বাসিন্দা ও কিছু দর্শনার্থীর সাথে কথা বলে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। কেউ পার্ক বন্ধের পক্ষে, আবার কেউ এর বিপক্ষে।
পেশায় ব্যবসায়ী আরাফাত চৌধুনী নামের এক বাসিন্দা বলেন, এখানে শিশুপার্কটির নগরীর অন্যান্য পার্কের তুলনায় টিকিট খরচ কম। যা এখনো নগরীর সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে। তাই পার্কটি এখান থেকে সরিয়ে নিলে সমস্যা হতে পারে। শিশুরা আরেকটি বিনোদন স্পট হারাবে। যা বর্তমান শিশুদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুফিউর রহমান টিপু বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানে টিকিটের দাম কম হলেও ভেতরে বিভিন্ন রাইডারে দাম অনেক বেশি। শিশুরা ভেতরে ঢুকলেই বায়না করতে থাকে। এতে আমারা অভিভাবকরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। এছাড়া পার্কের ভেতরের অংশে সন্ধ্যার দিকে একটা বাজে পরিবেশ দেখা যায়। তাই এটি বন্ধ করা দরকার। শহর থেকে খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই শিশুদের জন্য খেলার মাঠের প্রয়োজনও আছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট