চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ঘোড়াগুলোর দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে

ইফতেখারুল ইসলাম

২২ মে, ২০২০ | ৭:০১ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ঘোড়াগুলোর উপরও। অনেক ঘোড়া অর্ধাহারে এবং অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ঘোড়া থেকে আয় নেই, ঘোড়ার মালিকের চলতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ঘোড়ার কষ্ট আরো বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত পিঠে চড়া এবং পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে ঘোড়াগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
সৈকতে ঘোড়ার মালিকরা সাধারণত পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে ছড়িয়ে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও তারা ঘোড়াগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার দেয় না। তাতে ঘোড়াগুলো অতিরিক্ত পিঠে চড়া ও অপুষ্টির কারণে উভলারস ডিজিজ (ডড়ননষবৎং ফরংবধংব) এ ভোগে এবং পিছনের পা পারসিয়াল প্যারালাইসিস হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ঘোড়া মালিকের কাছে এক সময় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। আর বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সৈকতে পর্যটক নেই। যেখানে মালিকের আহার জুটাতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে ঘোড়াগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।
জানতে চাইলে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ পূর্বকোণকে বলেন, পতেঙ্গার আশেপাশের বেশির ভাগ ঘোড়া রাতের বেলা ছাড়া অবস্থায় থাকে। প্রায় সবগুলো রোগা। বেশিরভাগ ঘোড়া পরিমাণ মতো খাবার পায় না। তার উপর চলে পর্যটকদের ঘোড় সওয়ার হওয়ার সখ। অতিরিক্ত পিঠে চড়া ও অপুষ্টির কারণে উভলার ডিজিজে ভোগে এবং পিছনের পা আংশিক অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে যায়। ঘোড়া যখন পর্যটক বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন মালিকের কাছে তার কোন মূল্য থাকে না। পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুর অনেক আগেই ঘোড়াগুলো অক্ষম হয়ে বাকি জীবন অভুক্ত অনাহারে কাটিয়ে আরো করুণভাবে মারা যায়। বেশির ভাগ ঘোড়া না খেয়ে ও বিনাচিকিৎসায় মারা যায়। কারণ ঘোড়া যেহেতু আয় করে দিতে পারে না তাই তাকে বিন্দুমাত্র যত্ন করা হয় না। তিনি জানান, ঘোড়ার মালিকরা একটু সচেতন হলে এবং ঘোড়াকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিলে তবে সেগুলো অকেজো হত না। তখন ঘোড়ার মালিক আরো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা করতে পারতেন। ঘোড়াগুলোও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি পেত। এজন্য প্রানি সম্পদ অধিদপ্তর ও প্রাণি অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় যেসব ঘোড়া আছে তার সবগুলোই কুড়িয়ে পাওয়া পরিত্যক্ত ঘোড়া। ভাল ও সুস্থ ঘোড়া কেউ দেয় না। এখানে পারসিয়াল প্যারালাইসিস ঘোড়া তিনি এনেছিলেন উল্লেখ করে বলেন, যতদিন ঘোড়াগুলো চিড়িয়িাখানায় বেঁচে ছিল ভালভাবে খাবার এবং চিকিৎসা পেয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের রোগাক্রান্ত ঘোড়াগুলো সুস্থ হয় না। তিনটি ঘোড়াই পরে মারা গেছে।
ডা. শাহাদাত জানান, একটি ঘোড়াকে নিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকার লিংক দেখে তিনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোরে পতেঙ্গায় গিয়েছিলেন। সেখানে অন্তত ২০টি ঘোড়া রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্য ভাল নয়। লকডাউনের কারণে সেখানে পর্যটক যাচ্ছে না। আয় নেই। তাই খাবারও নেই। চড়ে খাওয়ার জন্য ঘোড়াগুলোকে ছাড়া অবস্থায় রাখা হলেও সেখানে ঘাস নেই। তাই অধিকাংশ ঘোড়া অভুক্ত এবং অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। যা অমানবিক।

শেয়ার করুন