চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

৩০% কমেছে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর গমন

অনলাইন ডেস্ক

১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৭:১৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মীদের সৌদি আরব গমন বড় পরিসরে শুরু হয় ২০১৪ সালে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে দেশটিতে গেলেও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের অনেককেই। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবে গমন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বাংলাদেশী নারী কর্মীরা। সৌদি আরবের গণমাধ্যম আল-মাদিনার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশী নারীকর্মীর গমন ৩০ শতাংশ কমেছে। সূত্র : বণিকবার্তা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশী নারী-পুরুষ কাজ করতে যান। তাদের মধ্যে ১৫ লাখ নারী পুরুষ কাজ করেন গৃহকর্মী হিসেবে। দেশটির অনেক পরিবারই বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের কাজে নিতে পছন্দ করে গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশীদের নিয়োগ দেয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে- বাংলাদেশীদের অতি সহজে এবং কম খরচে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নিতে পারেন সৌদি নাগরিকরা। মাত্র ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ রিয়াল খরচ করে একজন বাংলাদেশী গৃহকর্মীকে কাজে নিতে পারেন তারা। তবে সম্প্রতি দালালরা চুক্তির জন্য টাকার পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, যাকে সৌদি আরবে বাংলাদেশী নারী কর্মী গমন কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া অযোগ্যতা ও অদক্ষতা, প্রশিক্ষণ না থাকা, শৃঙ্খলাবোধের অভাবসহ আরো বেশকিছু বিষয়কে বাংলাদেশী নারী কর্মী ফেরত পাঠানোর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এতে।

একটি নিয়োগ অফিসের মালিক মোহাম্মদ আল বাকামির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগের সময় দুই দেশের দালালরাই খরচ বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে ওই দালালরাই অযোগ্য গৃহকর্মী পাঠিয়ে দেয় সৌদিতে যার কারণে কাজ করতে আসা বাংলাদেশী নাগরিকরা নানা সমস্যায় পড়েন। এমনকি দেশেও ফিরে যেতে বলা হয় তাদের।

সৌদি গণমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে এসব নানা সমস্যার কথা তুলে ধরলেও বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের নির্যাতন নিয়ে কোনো একটি শব্দ ব্যবহার করেনি তরা। অথচ কয়েক দিন পরপর দেখা যায়, নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত আসছেন বহু নারী। তা নিয়ে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হচ্ছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালেই প্রতি মাসে গড়ে ২০০ করে নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। একই সঙ্গে সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দায় সেফ হোমগুলোয় গড়ে ২০০ জন করে নারী শ্রমিক আশ্রয় নিচ্ছেন। গত দুই-তিন বছরে অন্তত পাঁচ হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এই নারীদের একটি বড় অংশ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নারী শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে মোট ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে সৌদি আরবে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ৭১৩ আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক বিদেশে যান। এ সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫। এর মধ্যে সৌদি আরবে যান ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে যাওয়া ৭১ হাজার ৯৪৫ জন নারী শ্রমিকের মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৪৪ হাজার ৭১৩ জন।

মূলত ২০১৪ সাল থেকেই বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী নারী শ্রমিক রফতানি বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে ৭৬ হাজার ৭ জন নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। ওই বছর সৌদি আরবে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩। ২০১৫ সালে নারী শ্রমিক রফতানি বেড়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জনে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে ২০১৪-এর তুলনায় ২০১৫ সালে নারী শ্রমিক প্রেরণে প্রবৃদ্ধি হয় ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এরপর ২০১৬ সালে বিদেশ যান ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন নারী শ্রমিক। এর মধ্যে সৌদি আরবে যান ২০ হাজার ৯৫২ জন। আগের বছরের তুলনায় ওই বছর নারী কর্মী রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কিন্তু সৌদি আরবে নারী কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছর থেকে কমতে থাকে দেশটিতে নারী শ্রমিক রফতানির হার।

 

 

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট