চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

কাজের অপেক্ষায় থাকতে হয় শ্রমিকদের

ফ্রি ভিসার ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর প্রবাস জীবন

সাদেক রিপন হ কুয়েত

২৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, ওমানসহ সব কয়টি দেশে ফ্রি ভিসা বেশি খোঁজে বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এ সকল দেশগুলোতে ফ্যামেলি ভিসা, ভিজিট ভিসা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ভিসা, খাদেম (বাসা) ভিসা, বাগানের ভিসা, কোম্পানির ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা দিয়ে থাকে। ফ্রি ভিসা নামে কোন ভিসা হয় না। ফ্যামেলি ভিসা, ভিজিট ভিসা কাজ করার অনুমোদন নেই। এছাড়া বাকী যেকোন ভিসা নিয়ে যে দেশেই যান আপনাকে সেই মালিকের নিকট কাজ করতে হবে। ফ্রি ভিসায় আশা শ্রমিকরা কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকে, ঘুরতে থাকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে। অন্য মালিক অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সেই দেশের স্থানীয় আইনে বেআইনি ও অবৈধ। অন্যত্র কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে আটক হলে জরিমানা করতে পারে এমনকি ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জেলখাটিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে সে দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। ভিসার দালালরা ভিসাগুলো নেয়ার সময় মালিকে বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে নিয়ে থাকে। ভিসা দেয়ার সময় মালিকরাও বলে দেন নিরাপদে থাকতে কারণ চেকে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে আটক হলে মালিকেও কৈফিয়ত দিতে হয়, তার লাইসেন্সের ওপর জরিমানা সিস্টেম ব্লক করে দেয়া হয়। মালিক নিজে বাঁচতে শ্রমিকদের দায়বার নিতে চায় না। যেহেতু ভিসার দালালেরা আগেই তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ভিসা বিক্রির নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছে সেই ক্ষেত্রে কোনসময় বিপদে পড়লে বেশিরভাগ মালিক এড়িয়ে চলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দিলে মালিক ভিসাটা পুনরায় অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে পারবে। যারা কাজ জানে সে দেশের ভাষা জানে তাদের অনেকেই হয়তো ঝুঁকি নিয়ে ভালই আয় করছেন রিজিকের ওপর বিশ্বাস করে। অদক্ষ অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক দালালরা তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে উচ্চমূল্যে ভিসা বিক্রি করে। সেও ধার দেনা, লোন, জমিজমাবন্ধক ও ভিটাবাড়ি বিক্রি করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ছুটে যান অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও গন্তব্যে। দালালরে কথা ও বাস্তবতার সাথে যখন মিল খুঁজে পায় না কাজের জন্য ঘুরতে হয় রাস্তায় রাস্তায় দুইদিন পেলে তিন দিন বেকার আবার অনেক সময় ৩/৬ মাস একটা কাজ করার পর সেই কাজ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় আবার কাজের সন্ধান করতে হয়। যাদের হয়তো পরিচিত বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয় আছে তারা কোন কাজ দিয়ে পারে যদি তাদের জানা থাকে। দেখা যায় নতুন কাজ আগের কাজ মিলেনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতে করতে কোন কাজই শিখা হয় না ভাল ভাবে।কাজের জন্য পরিচিতদের কে জানালে তারা দেখছি দেখছি ফোন দিয়েছি জানাবো ইত্যাদি কথা বলে সান্তনা দেয় বেশিরভাগ সময় আর যাদের পরিচিত কেউ নেই তাদের কাজ পাওয়া আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে। কাজ না পেলে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে এমন অনেক প্রবাসী রয়েছে। যার আশায় পথ চেয়ে থাকে পরিবার সে যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তার পরিবারের করুণ অবস্থার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঋণের সুদ, পরিবারে খরচ, চাকরির খোঁজ, বেতন বকেয়া, আকামা সমস্যা ইত্যাদি মানসিক চাপে বাসা বাঁধে নিরব ঘাতক স্ট্রোক। বর্তমানে বিদেশে শ্রমিকদের স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। পরিবারে জন্য সুখ কিনতে যাওয়া সেই মানুষটি যখন কাঠের কফিনবন্ধী হয়ে দেশে ফিরে হতাশা আর অন্ধকার নেমে আসে সেই প্রবাসীর পরিবারে।

ফ্রি ভিসা সম্পর্কে কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ফ্রি ভিসা বলে কোন ভিসা হয় না। লোকের দেয়া নাম এটা। পুরোটা নসিবের ওপর কাজ ও ভাষা জানা থাকলে তারা লাখ টাকা আয় করছে কেউ আবার কেউ নিজের থাকা খাওয়ার টাকা যোগাড় করতে পারলেও দেশে পরিবারের খরচ ঠিকমত বহন করতে পারে এমন লোকের সংখ্যা বেশি। কুয়েত ভিসা খরচ ১ লাখ টাকার মতো কিন্ত দালালদের হাত বদলের কারণে ভিসামূল্য পৌঁছে যায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায়। ফ্রি ভিসা অবৈধ এবং এই ভিসায় ঝুঁকি বেশি।

সাহিত্যিক ও সংগঠক রফিকুল ইসলাম ভুলু বলেন, মালিক থাকলেও কাজ নিজেকে খোঁজে নিতে হয়। যে কারণে এসব শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়ে কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকে বা ঘুরতে দেখা যায়। চেকে বা অভিযানে ধরা পড়লে জেল, জরিমানা, দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঝুঁকি ও আতঙ্কিত অবস্থায় থাকতে হয় সবসময়। ফ্রি ভিসা যেকোন দেশে অবৈধ। আগেও এইভাবে কাজের জন্য বসে থাকতো। লোক কম ছিল, কাজ ছিল বেশি কাজের মূল্য ছিল। বর্তমানে কাজ কম, লোক বেশি তাই কাজের মূল্যও কম। যাদের পরিচিত লোক আছে তাদের কেউ কেউ কাজ পেলেও আবার যার কেউ নেই সে বেকার অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করে ফ্রি ভিসায় এসে। অবৈধ শ্রমিক ধরতে আগের তুলনায় চেক বর্তমানে অভিযান বেশি হয়।

শেয়ার করুন