চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘সময় কম, টিকিট চাই’

মোহাম্মদ আলী

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:২৪ অপরাহ্ণ

মহামারীর কারণে দেশে আটকে পড়া সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। সাত মাস ধরে কর্মস্থলে ফিরতে না পারায় তাদের মধ্যে এ দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিলে দেশে আটকাপড়া সৌদি প্রবাসীরা সেদেশে ফিরতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন তারা টিকেটের জন্য বিমান অফিসসহ বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনার কারণে দেশে আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীদের সংখ্যা হবে লক্ষাধিক। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হবে ২০ থেকে ৩০ হাজার। এসব প্রবাসী ২০১৯ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দেশে ছুটি কাটাতে আসেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তারা দেশে আটকা পড়েন। বর্তমানে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে দেশে থাকা অবস্থায় চাকরিও হারিয়েছেন। যারা ব্যবসায় জড়িত তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে আরো বেশি। এ অবস্থায় সৌদি আরবে যেসব বাংলাদেশি কাজ পেয়েছেন তাদের আকামার মেয়াদ ২৪ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে সৌদি সরকার। গত ২৩ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আকামার মেয়াদ আরবি সফর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত (২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ২৪ দিন) বর্ধিত করা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ বিমানকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে মোট চার ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।’
এদিকে আকামার মেয়াদ বৃদ্ধির খবরে সেদেশে ফিরতে আটকা পড়া প্রবাসীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। প্রতিদিন তারা টিকেটের জন্য বিমান অফিসসহ বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন।
হজ্ব এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) চট্টগ্রাম শাখার চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আকামার মেয়াদ বাড়ানোর পর আগামী এক মাসের কম সময়ের মধ্যে দেশে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদের সেদেশে ফিরতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান জেদ্দা ও রিয়াদে সপ্তাহে মাত্র ৪টি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। অপরদিকে সৌদি এয়ারলাইন্সও নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনা করবে না। অন্য কোন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায়নি। ফলে এ অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক সৌদি প্রবাসীর কর্মস্থলে ফেরা অত্যন্ত কঠিন। ফলে সৌদি প্রবাসীরা সেদেশে ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেছে। টিকিট নিয়ে অনেকের কালোবাজারির শিকার হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। তাই এ মুহূর্তে বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর নেই। না হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
ভুক্তভোগী প্রবাসীরা জানায়, দেশে আটকে থাকায় তাদের আয়-উপার্জন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেরই সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে গেছে বহু আগে। উড়োজাহাজের টিকিট ক্রয়ের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। এর বাইরে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিবার পরিচালনা করছেন। এ ঋণের পরিমাণও ক্রমেই বেড়ে চলছে। এ অবস্থায় তারা কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গতি দেখছে না। যদিও ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ভিসা, আকামার মেয়াদ ও উড়োজাহাজের টিকিট ক্রয়সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের নানা সংকটের মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এদিকে বিমানের ফ্লাইট সংকটের কারণে ফ্লাইট বাড়াতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদকে ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে টেলিফোনে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া দাম্মাম রুটে দ্রুত ফ্লাইট চালু করতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, টেলিফোন আলাপে ড. মোমেন ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি ও ভিসা দেয়ায় সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান এবং বিমানের ফ্লাইট চলাচলে অনুমতি দেয়ায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে দাম্মাম রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্য সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমানে রিয়াদ, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ বিমানের চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, সৌদি আরব থেকে রিটার্ন টিকিট কেটে যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের টিকিট দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নতুন করে কোনও টিকিট বিক্রি করছে না এয়ারলাইন্সটি। টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে ফ্লাইট বাতিলের তারিখ ধরে পর্যায়ক্রমে টিকিট রি-ইস্যু করা হচ্ছে।
বিমান জানিয়েছে, তারিখ অনুসারে যাত্রীদের টিকিট রি-ইস্যু করছে তারা। করোনাভাইরাসের কারণে ১৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের আকাশপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ১৬ মার্চ থেকে পরবর্তী সব শিডিউল ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে বিমান ফ্লাইট বাতিলের তারিখ ধরে পর্যায়ক্রমে বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর টিকিট রি-ইস্যু করছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট