চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মেধা পাচার নয় বরং প্রতিনিধিত্ব

নিসর্গ নিগার

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৬:২৩ অপরাহ্ণ

গত বছর ঠিক এই দিনেই (২৪ সেপ্টেম্বর) রওনা দিয়েছিলাম জার্মানির উদ্দেশ্যে। এক বছর হয়নি, কারণ এর মাঝে কয়েক মাস দেশে থাকা হয়েছে। কিন্তু তারপরও যতদিন থেকেছি অনেক কিছু শিখেছি আর প্রতিনিয়ত শিখছি। আসার আগে চিন্তা করেছিলাম যেহেতু আমি নিজে সাহায্য পেয়েছি, অন্যদেরও সাহায্য করবো হায়ার স্টাডিজে। এজন্যই এত লেখালেখি। হয়তো একদিন কারো না কারো কোন উপকার হবে।

আমরা যারা চট্টগ্রাম থেকে পড়ে এসেছি, তাও প্রাইভেট – আমরা জানি আমাদের জন্য সুযোগ সুবিধা কতটা কম ছিল। হ্যাঁ, অবশ্যই ভাল শিক্ষক পেয়েছি, কিন্তু শহরের মধ্যেই কাউকে ভার্সিটির নাম বললে চিনতে পারতো না। তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে অনগ্রসর একটা শহরে নিজের স্টার্টআপ করে সেটা চালানোতে মাঝে মাঝেই অনেক বেশি হতাশা কাজ করতো। সেজন্য আমি এখানে আসার পর নিজের গ্রোথ বাড়ানোর কোন সুযোগই হাতছাড়া করিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই ভার্সিটির প্রোজেক্টে কাজ করেছি, গুগল অফিসে ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছি এবং জার্মান স্টার্টআপদের সাথে অনেক কিছু শিখেছি। আসার পর যেটা দেখি, তাই ভাল লাগে। এত এত সুযোগ সুবিধা!

ভার্সিটির মধ্যেই প্রতিদিন কোন না কোন স্টার্টআপের জন্ম হচ্ছে, পার্ট টাইম জব করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ানো যাচ্ছে, ক্যাম্পাসে রেসিং কার তৈরি হচ্ছে! ওদের পড়াশোনার গঠনের সামান্য একটুও যদি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করা যেতো, কতই না ভাল হতো! ইদানিং তাই বারবার একটা টার্ম শুনছি – Knowledge Transfer. আমরা যারা উন্নয়নশীল দেশ থেকে আসছি, তারা যেন যা পাচ্ছি সেটা দেশকে ফেরত দেই। ইউরোপিয়ানরা যদি আপনার মুখে শোনে আপনার এমন প্ল্যান আছে, তারা আপনাকে অনেক সম্মানের চোখে দেখবে। আমি মনে করি এজন্যই নতুনদের এই জিনিসগুলো জানা এতোটা জরুরি।

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করে, কেউ কেউ রিসার্চ বা টিচিং অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করে। অনেকে আছে যারা কাজ করে দেশে টাকা পাঠায়। কেউ আছে যারা বড় কোম্পানিতে চাকরি করে দেশের নাম ছড়িয়ে দেয়। সংখ্যাটা আরও বড় হতে পারে যদি যারা এখানে আছে তারা অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। বাইরের একজন মানুষ আপনাকে জানবে আপনার কাজ দিয়ে, আপনার ব্যবহার দিয়ে। বাংলাদেশি শুনলে তাদের মধ্যে যেন একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় সেটার দায়িত্ব প্রবাসীদের উপরও বর্তায়। হয়তো আপনি দারুণ কিছু করলেন যার জন্য আপনাকে বিদেশি কেউ মনে রাখলো। পরবর্তীতে অন্য কোন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হলে তার মনের মধ্যে একটা ভাল লাগা কাজ করবে।

নিজের সিভি, কভার লেটার শেয়ার করা, রেফার করা, নোট দেয়া, একটু সময় নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়া, কোন স্কলারশিপ দেখলে সেটা জানানো, নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলা – এগুলো সত্যিই এতোটা কঠিন কিছু না। আপনার মনে হতে পারে কেন আপনার সময় ব্যয় করে আপনি এগুলো করবেন? কিন্তু ভেবে দেখুন – বিদেশের মাটিতে থেকেও আপনি দেশি মানুষদের জন্য এই বিষয়গুলো কতো সহজ করে দিতে পারছেন। এই জায়গাটাতে কিন্তু বাংলাদেশিদের এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ আছে। নাহলে আসলে বাংলাদেশের পরিচিতি নিয়ে অভিযোগ করার কিছু নেই। অনেকের কাছে মনে হতে পারে মেধা পাচার, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। সবকিছুই আসলে মানসিকতার উপর।

 

লেখক: শিক্ষার্থী (মাস্টার্স), হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি, জার্মানি

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট