চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিড়ম্বনায় আটকে পড়া প্রবাসীরা

ইমাম হোসাইন রাজু

৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১:৪২ অপরাহ্ণ

প্রবাস থেকে দেশে এসে করোনায় আটকে পড়া প্রবাসীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। কোন কোন দেশের সাথে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও বেশির ভাগ দেশের সাথে এখনো শুরু হয়নি। এদিকে ফ্লাইট চালুর শুরু থেকেই টিকেটের উচ্চ মূল্য, অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন-বিভিন্ন নির্দেশনার কারণে দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীরা বিপাকে।

বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলা জানা যায়, দু’দিন আগেও যেখানে দুবাই-আবুধাবি ও শারজা রুটে উচ্চ মূল্য দিয়েও টিকেট পাওয়া ছিল সোনার হরিণ, সেখানে গতকাল থেকে বিভিন্ন এয়ালাইন্সে যাত্রী সংকটের শংকা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ বিমান ছাড়া বিদেশি দু’একটি এয়ারলাইন্স গোপনে রেড সিগন্যালের যাত্রী নিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানির পর এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গেল ডিসেম্বর মাসে ছুটিতে এসে আটকে পড়া কামরুল ইসলাম বাহরাইনে ফিরতে গিয়ে নতুন চিন্তায় আছেন। কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি বিমান ভাড়া। কামরুল জানান, আসার সময় বিমান ভাড়া দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেই ভাড়া চায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এমনিতেই দেশে আটকা থাকায় ঋণ করে চলতে হয়। এখন ভাড়া নিয়ে নতুন চিন্তায় আছি। গত সপ্তাহে বাহরাইন রুটে বিমান ভাড়া দেড় লাখ টাকারও বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন কয়েকজন যাত্রী।

তবে এমন পরিস্থিতির কারণ হিসেবে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, টিকেটের চাহিদা থাকলেও, ফ্লাইট সংখ্যা খুবই কম। তাই এ অবস্থা স্বাভাবিকে আনতে এসব দেশের সাথে ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানোর তাগিদ ট্রাভেল এজেন্সি এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের।

চট্টগ্রামের প্রথম সারির এক ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগেও সব রুটের ভাড়া বাড়তি ছিল। তবে দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোতে এখন ভাড়া অনেকটা নাগালে এসেছে। বাহরাইন রুটে এখনও তিনগুণের বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যার সমমান সিট খালি রাখতে হচ্ছে। যার কারণেও বিমান কর্তৃপক্ষ হয়তো দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। এছাড়া দুবাই-আবুধাবির ক্ষেত্রে রয়েছে এপ্রোভাল, গ্রিন ও রেড সিগন্যাল সংক্রান্ত জটিলতা’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিশে^র বিভিন্ন দেশে নানান পেশায় যুক্ত। তার সবচেয়ে বড় অংশই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এরমধ্যে কুয়েত, সৌদি আরব, দুবাই, কাতার ও বাহরাইনে বেশিরভাগ বাংলাদেশি রয়েছেন। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ঢাকা-বাহরাইন রুটে কেবল ইমারত ইয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহণ করছে। যার কারণে তারা উচ্চ মূল্যের সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এ রুটে অন্যান্য এয়ারলাইন্স চালু হলে ভাড়াও স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তাদের ধারণা।

এদিকে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে কাতার, দুবাই-আবুধাবি, দোহা রুটে ফ্লাইট। তবে গত ৪ আগস্ট থেকে কুয়েতে ফ্লাইট চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশিদের প্রবেশের নির্দেশনা দেয়নি ওই দেশের সরকার। এরমধ্যে সৌদি আরবে প্রবেশ বন্ধ থাকলেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশসহ ২৫ দেশকে সৌদিতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে সৌদি সিভিল এভিয়েশন জেনারেল অথরিটি। তবে কখন থেকে সৌদিতে প্রবেশ করতে পারবে এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো জানানো হয়নি। যদিও ট্রাভেল এজেন্সি গুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, পহেলা অক্টোবরের মধ্যে ফ্লাইট চালু হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের সভাপতি আবুল কাশেম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে সৌদি আরবের ফ্লাইট চালুর কথা আছে। তবে এ মাসে দশটি ফ্লাইট গিয়ে সৌদি আরবে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের নিয়ে আসবে। এ দশটি ফ্লাইটে হয়তো কিছু কিছু যাত্রী পাঠানোর সম্ভাবনা আছে। এরমধ্যে যারা পুরনো এবং দীর্ঘদিন আটকা পড়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কাতারেও আগামী সাত সেপ্টেম্বর থেকে ফ্লাইট চালু হবে। তাতেও পুরনো যারা টিকেট কেটে রেখেছিলেন, তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাঠানো হবে। যদিও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে করে গত ১ সেপ্টেম্বর কিছু যাত্রী পাঠানো হয়। মোটামুটি কাতারের দরজা এখন খুলছেই বলা যায়। আর ৭, ১৪ ও ২১ সেপ্টেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তিনটি পৃথক ফ্লাইট যাবে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট