চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা সংকটের প্রভাব কতটুকু পড়বে আমিরাতের শ্রমবাজারে?

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি

৬ জুলাই, ২০২০ | ২:১৫ অপরাহ্ণ

প্রায় আট লাখ জনশক্তি নিয়ে আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার। করোনাভাইরাসের ছোবলে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের মুখে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের যোগানদাতা আমাদের রেমিটেন্স সৈনিকেরা। এ নিয়ে আমিরাতে বাংলাদেশের শার্জ দ্য এফেয়ার্সের অভিমত নিচে তুলে ধরা হলঃ
প্রশ্ন: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আমিরাতে কি পরিমাণ বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে আপনার ধারণা?
উত্তর: সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, এ ব্যাপারে আমাদের কোন স্ট্যাটিস্টিকস নাই। আমরা এজন্য কোন রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নিই নাই। যারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেশে যেতে চান, শিশু, মহিলা, অসুস্থ প্রবাসী, ভিজিট ভিসায় এসে যারা আটকা পড়েছেন তাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এসব ফ্লাইটে এ পর্যন্ত ২ হাজারের মত বাংলাদেশির দেশে প্রত্যাবসন করা হয়েছে। ইউএই সরকার এ পর্যন্ত ১৩টি ফ্লাইটে বাংলাদেশের তিন হাজারের মতো প্রবাসী কর্মজীবী, অসুস্থ প্রবাসী, মহিলা ও শিশুকে এবং ভিজিট ভিসায় এসে আটকা পড়া প্রবাসীদের বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন করেছে। এছাড়া প্রায় প্রতি মাসে পাঁচ/ছয়শ’ বাংলাদেশিকে অভিবাসন আইন লংঘনের দায়ে কিংবা ছোটখাটো অপরাধের কারণে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের দেশে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, করোনাকালে প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন যার মধ্যে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান পরিস্থিতির কারণে তাদের কর্মীদের বিনা বেতনে দীর্ঘকালীন ছুটিতে পাঠাচ্ছেন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবীদের ডাটাবেজ রাখা হচ্ছে যাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন সাপেক্ষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসীরা আমিরাত আসতে অগ্রাধিকার পান। যদিও তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া প্রবাসীর সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি।

শার্জ দ্য এফেয়ার্স বলেছেন, আমরা অনুধাবন করতে পারছি যে করোনা পরিস্থিতির কারণে এখানে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় অনেকের চাকুরি ও কর্মের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে আমরা দূতাবাস ও সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করছি যার ফলে শ্রমিক ছাঁটাই কিংবা কর্মী সীমিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা মিনিমাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে আভ্যন্তরীণ ভিসা ট্রান্সফার হতে পারে তার জন্য যোগাযোগ রক্ষা করছি।
প্রশ্ন: করোনা সংকটের কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থান কতটুকু হুমকির মুখে পড়বে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: তিনি বলেন, এটা একটা গ্লোবাল ফেনোমেনন। এই করোনা সংকটের কারণে ঢাকা থেকে বহু লোক কর্মসংস্থানের অভাবে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। একইভাবে এতে আমিরাতে আমাদের শ্রমবাজারে যে প্রেসার পড়বে তা অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে এটা নির্ভর করছে সংকট কতটুকু দীর্ঘস্থায়ী হবে তার উপর। যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে চাপটা বেশি পড়বে আর স্বল্পস্থায়ী হলে চাপ তুলনামূলকভাবে কম পড়বে যা আমরা সহজে রিকভার করতে পারব। তবে আমরা আমিরাতের সাথে দরকষাকষিতে আছি। নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথে কথা বলেছেন। আমরা চাইছি আমাদের শ্রমজীবীদের রিপ্যাট্রিয়েশান ধীর গতির হোক।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাথে এক ফোনালাপে বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফেরত না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন আমাদের কর্মীরা করিৎকর্মা। তারা একটি কাজে থাকলেও কিন্তুকুইক লার্নার। করোনাত্তোরকালে আমিরাতসহ সারা বিশ্বে খাদ্যঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশিরা খাদ্য উৎপাদনে অত্যন্ত সফলকাম। আপনাদের সবুজায়নে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই কাজে শ্রমজীবীদের নিয়োজিত করা গেলে সাফল্য পাওয়া যাবে। আমিরাতী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি একটি উত্তম প্রস্তাব। তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

এ ধরনের ডিপ্লোমেসিকে প্রবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন। আমিরাতের সাথে সফল কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে এ দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান পুনরায় গড়ে উঠতে পারে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন