সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ‘মৃত্যুর মুখ থেকে’ ফিরে এলেন রাজু সরকার (৩৯) নামে এক বাংলাদেশি। এদিকে রাজুর সুস্থ হওয়ার ঘটনায় সে দেশের চিকিৎসকরা বিস্মিত।
সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৫ মাস হাসপাতালে থাকা রাজু সরকারের অর্ধেক সময়ই পার হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র- আইসিইউতে। মে মাসের মাঝামাঝিতে তাকে টিটিএসএইচ পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। আর গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) টান টক সেং হাসপাতাল (টিটিএসএইচ) থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এরইমধ্যে ২৪ কেজি ওজন হারালেও সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তিনি।
রেসপিরেটরি এন্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বেঞ্জামিন হো বলেন, এত দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার পর তার নাটকীয়ভাবে সেরে ওঠায় বিস্মিত চিকিৎসকরাও।
ডা. হো আরও বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় রাজুর অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল এবং দুই/তিন বার ‘মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন’ তিনি। তার রক্তচাপ খুব কমে গিয়েছিল এবং তিনি অক্সিজেন নিতে পারছিলেনও খুব কম। আমরা ভেবেছিলাম, তাকে অনেকদিন অক্সিজেন দেওয়া লাগবে এবং [রাজুর ঘটনা] সিঙ্গাপুরে প্রথম দিকের মৃত্যুর একটি হবে বলে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম,”।
এদিকে,তার ফিজিওথেরাপিস্ট সিমন লাউ জানান, “তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। আইসিইউতে দীর্ঘ দিন থাকার কারণে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তবে সুস্থ হয়ে উঠতে তিনি খবুই আন্তরিক ছিলেন। ব্যায়ামে খুব আগ্রহী ছিলেন, নিজের থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা ছিল তার এবং এমনকি ওয়ার্ডে বিশ্রামে থাকার সময় নিজেই ব্যায়ামগুলো করতেন।”
গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরেও সেরে ওঠার বিষয়ে রাজু সরকারের মনোবল দৃঢ় ছিল। পুনর্বাসন কেন্দ্রে শরীরে শক্তি ফিরে পাওয়া ও কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেসের জন্য ফিজিওথেরাপি নিতে হয় তাকে। নিজের যত্নের জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টেরও শরণ নিতে হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঁচ সপ্তাহে ১০ কেজি ওজন বেড়েছে তার।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে প্রথম যে কয়েকজন বিদেশি কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজু তাদের অন্যতম। অসুস্থ হওয়ার সময় বাংলাদেশে রাজুর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, গত ৩০ মার্চ তাদের সন্তান হয়েছে। পরিবারের প্রতি টানই তাকে ‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার প্রেরণা যুগিয়েছে’ বলে তার চিকিৎসক এবং নার্সরা মনে করেন।
রাজু স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন “আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। তিন বা চার মাসের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার আশা করছি।’’
দুই মাসের জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু । এই সময় পার হলে আবার তাকে ফলো-আপের জন্য আসতে হবে স্ট্রেইটস টাইমস এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
পূর্বকোণ/এএ