চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বছরের শুরুতে লেখাপড়া হোক গতিশীল

শিমু বিশ্বাস

৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

দেখতে দেখতে চলে এলো নতুন বছর। ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বইও পাওয়া হয়ে গেল। বছরের ১ তারিখ প্রতি বছর সারাদেশে সরকারের উদ্যোগে ‘বই উৎসব’ এর আয়োজন করা হয়। এ উৎসব এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়। পাঠ্যবইগুলোই মূলত বিদ্যালয় থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এখন যেহেতু সৃজনশীল কাঠামোতে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয় তাই পাঠ্যবইয়ের গুরুত্ব ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অধিক গুরুপূর্ণ। এর পাশাপাশি গাইড বইয়েরও দরকার আছে। গাইড বইয়ে কিছু অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন এবং নৈব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে, যা থেকে ছাত্রী-ছাত্রীরা প্রশ্ন প্যার্টান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্যে গাইড বই কিনে।

বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত বছরে দুটো পরীক্ষা হয়ে থাকে। একটি অর্ধ-বার্ষিকী বা ষান্মাসিক এবং আরেকটি বার্ষিক পরীক্ষা।
আমাদের সমাজে প্রায়ই ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেকাংশেই লক্ষ্য করা যায় আর তা হলো বছরের শুরু থেকেই লেখাপড়ার প্রতি এক প্রকার উদাসীনতা। কারণ অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা হয় প্রায় জুন মাসের শেষের দিকে কিংবা জুলাই মাসের প্রথম দিকে।
এমতাবস্থায় প্রায় শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে। যে পরীক্ষা আসলে পড়বো ভালো করে। এখন তো জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাস অতো পড়ে কি হবে? পড়ার তো অনেক সময় আছে, আস্তে ধীরে পড়বো।

কিন্তু যারা এমনটা ভাবছে তারা বুঝতে পারে না যে তারা তাদের কতো মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলছে, এ সময়টা বছর শুরু থেকেই কাজে লাগানো উচিত। এ ব্যাপারে অভিভাবকগণের অবশ্যই সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে যদি কোন চিন্তা চেতনা কাজ না করে তাহলে তাদের সন্তানদের মধ্যে সেই ধ্যাণ-ধারনা কখনোই আসবে না।

শুধু পরীক্ষা আসলেই পড়বো এমন ধারনা নিয়ে বসে থাকে অনেক শিক্ষার্থী। কিংবা পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাস দু-তিনেক আগে থেকে একেবারে মন দিয়ে পড়াশোনা করব। এখানে একটা বিষয় বলতেই হয়, পরীক্ষার দু-তিন মাস আগে থেকে পড়লে কি আদৌ মানসম্মত ফলাফল করা যায়? ভালো ফলাফল তো হয় না বরং কোন রকম ঠেলেঠুলে পাশ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভালো ফলাফল করা সম্ভব তাদের পক্ষেই যারা বছরের শুরু থেকে কোন প্রকার সময় হেলায় নষ্ট না করে মনোযোগ দিয়ে পড়ে বা কাজে লাগায়।
সাধারণত প্রায় সব স্কুলগুলোতে দেখা যায় বছরের শুরু থেকে তেমন একটা তোড়জোড় নেই লেখাপড়ার। প্রথম এক দেড় মাস যায় শুধু ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে। এরপর স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি নিয়ে যায় আরো পনেরো/বিশ দিন। এরপর সিলেবাস দেওয়া এবং পরে আস্তে আস্তে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস শুরু হয়।

আমাদের দেশের বেসরকারি স্কুল বা ক্যাডেট স্কুলগুলোতে দেখা যায় অন্য স্কুলগুলোর তুলনায় আগে থেকেই লেখাপড়া নিয়ে একরকম ব্যস্ততা থাকে। বছর শুরু থেকেই সিলেবাস দেওয়া ক্লাস টেস্টসহ পূর্ণাঙ্গ পাঠদান শুরু হয়ে যায়। সেদিক থেকে সরকারি কিংবা সিটি কর্পোরেশন এর আওতাধীন যেসব স্কুল রয়েছে সেখানে একটু দেরিতেই পূর্ণাঙ্গ পাঠদান শুরু হয়।

স্কুলগুলোতে প্রথম এক-দেড় মাস দৈনিক চার ঘণ্টা করে ক্লাস চলে। এই অবস্থায় বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখায় কিছুটা ফাঁকিঝুঁকি দেয়। তবে এ কথাও ঠিক যারা মেধাবী, তারা এ সময়টুকুকে নষ্ট না করে বছরের শুরু থেকেই মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া শুরু করে।

বছরের শুরু থেকে যদি অল্প অল্প করে পড়া শুরু করা হয়,তাহলে তা পরীক্ষার আগে নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। আবার পারলে কমপক্ষে দু’বার রিভিশনও করা যায়। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা ভালো হয়। তবে এ ব্যাপারে অভিভাবকদের ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ একজন স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী অতোটা বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে পড়লে কি হবে! অথবা ভালো ফলাফলের জন্য কিভাবে পড়া উচিত। তাই এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা খুব প্রয়োজন। বছরের শুরু থেকে সঠিকভাবে লেখাপড়া করলে বছরের শেষে গিয়ে আর মানসিক চাপ নিতে হয় না। শুধু তাই নয়, ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল করতে পারে এবং প্রচুরভাবে জানার সুযোগ পায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট