চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখুন

এমদাদুল হক সরকার

২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

চার বছরের ছেলে আকিব। মায়ের ফোনে দিব্যি গেমস খেলে যাচ্ছে। হাত থেকে ফোন নেয়ামাত্রই কান্না শুরু করে দিল। খাওয়ার সময়ও মোবাইল ফোন চাই তার, এক ধরনের আসক্তি পেয়ে বসেছে। আকিবের ফোনে আসক্তি দেখে তার বাবা-মা খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন।

এ চিত্র শুধু আকিবের পরিবারে নয়, সারা বাংলাদেশের। প্রায়ই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ফোনে আসক্তি দেখে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন। ডিজিটাল বিপ্লবের এ যুগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না এমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।

কিন্তু বাচ্চারা যখন ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে, তা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়। ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ছে। প্রায় ৫০ ভাগ শিশু ল্যাপটপ ব্যবহার করে। স্কুলে ডেস্কটপ ব্যবহারের সংখ্যা আরও বেশি।

শিশুদের মোবাইল ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপে এত বেশি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ কী? প্রথমত, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মা-বাবা দু’জনই চাকরিজীবী। অফিস শেষ করে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মা-বাবার আদর-যত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হন। তাই তারা বাচ্চাদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিচ্ছেন। ফলে শিশুরা সহজেই এসবে আসক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একসময় শিশুদের
খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ছিল। তখন বাচ্চারা বাইরে খোলা মাঠে খেলাধুলা করত। বর্তমানে খোলা মাঠ যেমন নেই তেমনি ঘরের বাইরে শিশুদের খেলতে পাঠানোর আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবেন অভিভাবকরা। তাই অনেক অভিভাবকই ঘরে বাচ্চাদের গেমস, কার্টুন দেখে সময় কাটানোকে শ্রেয় মনে করেন। তৃতীয়ত, আপনি হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। আপনার পাশে বসে ছোট বাচ্চাটা দুষ্টুমি করছে। তাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাকে নিমিষেই শান্ত করে আপনি আপনার কাজে মনোনিবেশ করলেন। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুদের মানসিক বিকাশ। মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে চোখের নানা রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। স্মার্টফোন তথা ইন্টারনেট আসক্তি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়।

শিশুর ধৈর্য ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ফলে শিশু ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু, অসামাজিক ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। তার সহজাত সামাজিক গুণাবলির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় ধরে ফোন ব্যবহারের কারণে শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়। এতে তারা ‘মনোযোগের ঘাটতিজনিত চঞ্চলতা’ বা ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার আ্যক্টিভিটি ডিসর্ডার’ নামক জটিলতায় ভোগে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিশুরা অপ্রাপ্ত বয়সেই না বুঝে বিভিন্ন অনৈতিক ও আপত্তিকর বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়। সহজেই এ বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়ায় তারা এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে অভিভাবকদের এখনই সচেতন হতে হবে। সন্তানকে অধিক সময় দিলে; পারিবারিক ও সামাজিক সংযোগ বাড়লে শিশুদের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে আসক্তি অনেকটা কমে যাবে।

উপযুক্ত বয়সের আগে তাদের হাতে ফোন কম দিতে হবে।

অভিভাবকদেরই নির্ধারণ করতে হবে তার সন্তানের হাতে ফোন দেয়ার উপযুক্ত সময় কখন। বিলাসিতাস্বরূপ স্মার্টফোন কিনে দেয়া যাবে না। ঘরের বাইরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করতে পারলে মোবাইল আসক্তি সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।

শেয়ার করুন