মূলত একজন শিক্ষার্থীকে তার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে বেশি করে ভাবতে হয় এইচএসসি পাশ করার পরই। তখন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বাস্তবমুখী কারণ এই সিদ্ধান্তই তার জীবনকে নিয়ে যাবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে। এখানে অনার্স (প্রফেশনাল) কোর্স সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
অনার্স (প্রফেশনাল)-এর সাথে অনার্স ও ডিগ্রি কোর্সের আবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ অনার্সে আবেদন করলে এগুলোতে আবেদন করতে পারবেন না ব্যাপারটি এরকম নয়। অনার্স ও ডিগ্রি এবং প্রফেশনাল সবগুলোই কিন্তু আলাদা আলাদা কোর্স। কোনোটির সাথে কোনোটির সম্পর্ক নেই। তবে একসাথে দু’টি কোর্সে ভর্তি হওয়া যাবে না কারণ অনার্স (প্রফেশনাল) কোর্স ও অনার্স দুটোই সমমান। কোর্স শেষে সরাসরি বিসিএস ও সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উল্লেখযোগ্য প্রফেশনাল কোর্সগুলো হলো সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), ইসিই (ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং), বিবিএ (ব্যাচেলর অভ বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন), এফডিটি (ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি), এএমটি (এপারেল ম্যানুফ্যাকচার এন্ড টেকনোলজি), কেএমটি (নিট ম্যানুফ্যাকচার এন্ড টেকনোলজি)। এমবিএ (মাস্টার্স অভ বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন), বিবিএ (প্রফেশনাল) কোর্সে যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো হলো ফিন্যান্স, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং। এছাড়াও আরো কোর্স রয়েছে। এর ভেতরে বিবিএ ও সিএসই অন্যতম। ইঞ্জিনিয়ারিং ও সায়েন্সের বিষয়গুলোতে আবেদন করতে পারবে শুধু সায়েন্স থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বাকি সকল কোর্সে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
প্রফেশনাল কোর্সগুলো ব্যয়বহুল কারণ এসকল কোর্স কোনো সরকারি কলেজে নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ ও প্রতিষ্ঠান প্রফেশনাল কোর্স করিয়ে থাকে। কোর্সগুলো বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সেমিস্টার হিসেবে হয়ে থাকে। চার বছরে আট সেমিস্টারে খরচ প্রায় ১ লাখ টাকা।

প্রফেশনাল কোর্সগুলো হয়ে থাকে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে। বছরে ভর্তি করানো হয় একবার। সাধারণত অনার্সের ১ম/২য় মেরিট লিস্ট প্রকাশের পরই প্রফেশনালে আবেদনের নোটিশ দেয়া হয়। প্রফেশনাল বিবিএ-তে আইবিএ (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন) সিস্টেমে ও সিলেবাসে পড়ানো হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই কোর্সও স্বনামধন্য। কোর্সটি পুরোপুরি ইংরেজি মাধ্যমে হওয়াতে চাকরির ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয় বেশি। ২০০০ সাল থেকে একমাত্র প্রফেশনাল কোর্সে কোনো সেশনজট নাই (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসারে) এবং নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই কোর্সটি চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় কারণ আমরা আমাদের দেশে যে বিবিএ (প্রফেশনাল) কোর্সটি করানো হয় তা সমানভাবে পড়ানো হয় বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। বাংলাদেশে দু’ধরনের বিবিএ কোর্স রয়েছে। একটি একাডেমিক ও অন্যটি প্রফেশনাল। সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক বিবিএ (অনার্স) পড়ানো হয়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইবিএ-তে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল বিবিএ পড়ানো হয় যেখানে অনার্স শেষে ৩ মাসব্যাপী ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। ফলে চাকরিতে প্রবেশের আগেই অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হন তারা।
এ প্রসঙ্গে নগরীর হালিশহরের বড়পোলে অবস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট অভ বিজনেস স্টাডিজ (আইবিএস)-এর পরিচালক শরীফুল ইসলাম লিখন বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্র প্রসারিত হওয়ায় আজকাল অনেক শিক্ষার্থী বিবিএ পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাই এইচএসসি উত্তীর্ণ যে সকল ছাত্রছাত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তির সুযোগ পায় না এবং বিপুল অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্য যাদের নেই তাদের জন্য স্বল্প খরচে এই বিবিএ কোর্সটি অত্যন্ত সময়োপযোগী।’

তিনি জানান, সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে আইবিএস প্রথম শ্রেণির একটি প্রতিষ্ঠান যার কলেজ কোড ৪৩৫৮। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফলাফল, পড়াশোনার মান, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গী, শিক্ষকবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেমিস্টারের ৩য়, ৮ম স্থান অধিকার সহ গড়ে ৩/৪টি স্থান সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী তাদের বিবিএ ডিগ্রি সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। শরীফুল ইসলাম লিখন আরো জানান, এখানে ক্লাশ পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা। আছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি। পাঠ মূল্যায়নের জন্য রয়েছে পাক্ষিক, মাসিক এবং ইন্টারনাল পরীক্ষা। আইবিএস-এর প্রাক্তন কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্তর্জাতিক প্রফেশনাল কোর্সে হাতে কলমে তারা যা শিখেছেন তা পেশাগত জীবনে তাদের বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ৪ বছর মেয়াদী এই কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা আইবিএস অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।