চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৩ বছরে ঝরেছে মাধ্যমিকের সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১১:২৩ অপরাহ্ণ

প্রাথমিক সমাপনী থেকে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার হার কিছুতেই কমছে না। অথচ দেশে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বহাল রয়েছে।

সাম্প্রতিক এক তথ্যে দেখা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় পাসের পর অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া পর্যন্ত গত তিন বছরে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এর জন্য শিক্ষা খরচ বৃদ্ধি, সামাজিক পরিস্থিতি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে কারিকুলামের সমন্বয়হীনতা, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য, বাল্যবিবাহসহ নানা প্রতিকূলতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৬ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করেছিল ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩২ জন। আর ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৮১৮ জন। উভয় পরীক্ষায় মোট পাস করেছিল ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে যেসব শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় পাস করেছিল তারাই আগামী ২ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার জেএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৬ জন। জেডিসি পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থী তিন লাখ ৭০ হাজার ৬৭৫ জন। দুই পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮১ জন। অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন বছরের ‘শিক্ষা জার্নি’ থেকে ছিটকে পড়েছে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৬৯ জন। শতকরা হিসেবে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ স্তরে চার লাখ ৮০ হাজার ৯৩৫ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, ২০০৮ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমে আসছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার অনেক বেশি। প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে এ হার কমিয়ে আনা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার মূল কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিত। মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ছাত্রী। যারা বাল্যবিবাহ এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষা চালিয়ে নিতে পারছে না। আর ছাত্ররা যোগ দিচ্ছে কাজে। কারণ পড়ালেখার চেয়ে কাজের মাধ্যমে আয় করাই দরিদ্র পরিবারের কাছে লাভজনক বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল, হাওর ও পাহাড়ের চিত্র খুবই উদ্বেগজনক। দুর্গম এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন। এজন্য সরকার তিন পার্বত্য জেলা ও চরাঞ্চলে আবাসিক স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার বেশি । প্রাথমিক স্তরে উপবৃত্তি ও দুপুরে খাবার দেয়ার কারণে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে এর ধারাবাহিকতা বজায় না থাকার কারণে অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। যাতে তিন বছরে আস্তে আস্তে শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।

বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ঝরেপড়া রোধে বিশাল ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান জানান, সারাদেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় এখন সাধারণ মানুষও তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করছে। এছাড়া পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো বৃত্তি  চালু আছে। মেয়েদের বাল্যবিবাহে নিরুৎসাহ করার উদ্যোগসহ আলোচ্য নানা উদ্যোগের কারণে আগের চেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া অনেক কমে গেছে।

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন