চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জেএসসি

জিপিএ-৫ হ্রাস মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ | ১:২২ অপরাহ্ণ

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রকাশিত ফলাফলকে কয়েক বছরের ফলাফলের সাথে তুলনা করে দেখা যায় গত তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে কমছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১ হাজার ২৪০টি বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মোট ২ লাখ ২ হাজার ৪৫৫ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২৩১ জন। শতকরা হিসেবে এর হার ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির এই হার গত বছরের অর্ধেকেরও কম। গতবছর চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৩১৫ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এই বোর্ডে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৪ হাজার ১৩৫ জন। ফলে তিন বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও জিপিএ-৫ কমেছে অর্ধেক হারে। তিন বছরে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ কমে এসেছে তিনভাগের একভাগে। মূল্যায়ন পদ্ধতির ধারাবাহিক পরিবর্তনেই জিপিএ-৫ ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে বলছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
শুধু জিপিএ-৫ নয়। গত তিন বছরে এই পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কমেছে আরো অনেক ফলাফল। এর মধ্যে সবার ওপরে আছে শতভাগ পাসের বিদ্যালয়ের সংখ্যা। ২০১৬ সালে শতভাগ পাশের বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১৯২টি, ২০১৭ সালে তা নেমে আসে ৯০টিতে। এই বছর আরো এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো একটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯টিতে। এছাড়া গত দুই বছরে শূন্য পাশের হারের একটি প্রতিষ্ঠান না থাকলেও এই বছর খাগড়াছড়ির পানছড়ির একটি স্কুলে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি।
এছাড়া, সার্বিকভাবে পাশের হার গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও তিন বছরে পৃথকভাবে ছাত্র-ছাত্রীর পাশের হার কমেছে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯০ দশমিক ৪২ শতাংশ ছাত্রী পাশ করে। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮০ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এ বছর আরো একটু কমে গিয়ে এই হার দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একই অবস্থা ছাত্রদের ফলাফলে। ২০১৬ সালে জেএসসিতে ছাত্রদের পাশের হার ৯১.১৪ শতাংশ। ২০১ ৭ সালে তা নেমে আসে ৮১.৪২ শতাংশে। এই বছর আরো একটু কমেছে এই হার। এ বছর পরীক্ষা দেওয়া মোট ছাত্রের ৮২ দশমিক ২৭ শতাংশ পাশ করেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান পূর্বকোণকে বলেন, ‘পূর্বে অষ্টমের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়ের নম্বর ধরেই ফলাফল হিসাব করা হলেও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধারাবাহিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এবার তা না করা হয়নি। ফলে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।’
পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো ১৩টি বিষয়ে। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে ২০১৭ সালে শারীারক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, চারুকলা, ক্যারিয়ার শিক্ষা এই তিনটি বিষয়কে বাদ দিয়ে ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই বছর পরীক্ষা নেওয়া হয় ৭টি বিষয়ে। আগের বছরের বাংলা ১ম পত্র ও ২য় পত্রকে একটি বিষয় এবং ইংরেজি ১ম পত্র ও ইংরেজি ২য় পত্রকে একটি বিষয় ধরে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে চতুর্থ বা অপশনাল বিষয়ের যে ২ পয়েন্ট মূল জিপিএ এর সাথে যুক্ত হতো, এ বছর সে নিয়মও তুলে দেওয়া হয়। চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ না হওয়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে। শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনদের মতামতের ভিত্তিতেই জেএসসি পরীক্ষায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনেই জিপিএ-৫ প্রাপ্তি কমছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বছরের বিষয়টি আলাদা। চতুর্থ বিষয় বাদ দেওয়াতেই এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর আগের বছরগুলোতে সার্বিকভাবেই ফলাফল খারাপ হয়েছিল। এর সাথে পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের যোগসূত্র নেই।’
জিপিএ-৫ না পাওয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জেএসসি একটি প্রমোশন পরীক্ষা। এর ফলাফল শিক্ষাজীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় মোট নম্বরের ভিত্তিতে। এখানে জিপিএ কোন ফ্যাক্টর না।
কিন্তু ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আক্তার বলেন, ‘জিপিএ-৫ যারা পায়, স্বাভাবিকভাবেই তাদের মোট নম্বর অন্যদের থেকে বেশি হয়। একটা দুইটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে।’ জিপিএ-৫ কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যুক্ত না হওয়াতেই এবার রেজাল্ট কিছুটা কমেছে। কিন্তু পাশের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখার মান, প্রস্তুতির ওপরও এটি নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট