চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

করোনা পরিস্থিতিতে প্রাইমারি শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রাখার নির্দেশ

প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা

চার লাখ শিক্ষার্থী পাচ্ছে ৩৭ কোটি টাকা উপবৃত্তি

ইমরান বিন ছবুর

২৪ জুলাই, ২০২০ | ১২:২৪ অপরাহ্ণ

সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রাম জেলার সরকারি প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণ শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের অর্থ বছরে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ৩৭ কোটি টাকা উপবৃত্তি বিতরণ করা হবে। দুই ধাপে এসব অর্থ বিতরণ করা হবে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের উপবৃত্তি বাবদ বিতরণ হচ্ছে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ১২৫ টাকা। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে এপ্রিল-জুন মাসের উপবৃত্তি বাবদ ১৯ কোটি ৬২ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার ২০টি থানা ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে এসব উপবৃত্তির টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইল একাউন্টের (শিউর ক্যাশ) মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে যেসব শিক্ষার্থীর মা নেই বা মায়ের মোবাইল একাউন্ট নেই, সেক্ষেত্রে তাদের বাবার মোবাইল নম্বরে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে উপবৃত্তির পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষার্থী প্রতি উপবৃত্তি ৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১২৫ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে কিডস এলাউন্স (পোশাক, জুতা, ব্যাগ) বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীকে এক হাজার টাকা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এজন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে অধিদপ্তরে যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান করে কমিটি গঠনের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং অফিসার (উপবৃত্তি) জাহেদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামের মোট দুই হাজার ২৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবে। এরমধ্যে জানুয়ারি-মার্চ এর উপবৃত্তির টাকা বিতরণ চলছে। চলতি বিতরণে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষার্থী মোট ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ১২৫ টাকা উপবৃত্তি পাবে। এরপর এপ্রিল-জুন মাসের উপবৃত্তি বাবদ তিন লাখ ৯৬ হাজার ১৭ জন শিক্ষার্থী মোট ১৯ কোটি ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা উপবৃত্তি পাবে। এছাড়াও, কিটস এলাউন্স স্কুল (ড্রেস, ব্যাগ, জুতা) বাবদ শিক্ষার্থীরা ৪৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা পাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি থাকার আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য প্রতিমাসে নূন্যতম গড়ে ৮৫ শতাংশ পাঠ দিসবে উপস্থিত থাকতে হবে। উপবৃত্তির টাকা দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর খাতা-কলমের খরচ মেটানো সম্ভব। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এই উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হয়।’
জানতে চাইলে কাজীর দেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তপতী চক্রবর্তী জানান, ‘শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। যাদের মায়ের মোবাইল একাউন্ট নেই তাদের বাবার মোবাইল একাউন্টে উপবৃত্তির অর্থ প্রদান করা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মা না থাকায়, তাদের বাবার নম্বর উপবৃত্তির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য সরকার উপবৃত্তির পরিমাণও বৃদ্ধি করেছে।’

উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধ ও স্কুলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নিয়ে ২০০০ সালে প্রথম উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করা হয়। ওই বছরেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১২৭ টি উপজেলায় প্রকল্পটি চালু হয়। ২০০২ সাল থেকে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত দেশের সকল উপজেলায় প্রকল্পটি চালু হয়ে রাষ্ট্রিয় ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে সুবিধাভোগী মা অথবা অভিভাবকের মাঝে সরাসরি কার্ডের মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হতো। পরবর্তীতে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণ শুরু হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট