চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্মমুখী শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের

রাজিয়া সুলতানা মুন্নী

২ মার্চ, ২০২০ | ৩:১৭ পূর্বাহ্ণ

পুঁথিগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন।
বিদ্যা ও ধন এ দুটোই মানুষের জীবনে খুবই প্রয়োজন। জীবনে কঠোর পরিশ্রম না করলে কোন কাজেই সফলতা আসেনা। শিশুরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার লক্ষ্য নিয়েই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। আর তার এই শিক্ষা যদি কর্মমুখর শিক্ষা না হয় তাহলে বাস্তব জীবনে তা শিশুরা কাজে লাগাতে পারবেনা। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ইংরেজ আমল থেকে আজ অবধি পুস্তককেন্দ্রীকই বলা চলে। পাঠ্যবইয়ের পড়াগুলি শিক্ষার্থীরা কোনরকমভাবে মুখস্ত করে পরীক্ষায় কৃতকার্যের জন্য। কিন্তু সে শিক্ষা তারা সবসময় কার্যক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে না। তাদের সুন্দর জীবন গঠনে পুঁথিগত বিদ্যার কিছুটা প্রয়োজন আছে বৈকি। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যা মানুষের জীবনে সব সমস্যার সমাধান করেনা। পশ্চিমা দেশগুলোতে পড়াশোনা পদ্ধতিটা খেলার ছলেই শেখানো হয় বেশি। সেখানে প্রমোশন বা ভালো রেজাল্ট বড় কথা নয়। ছোট শিশুরা খেলার ছলেই অনেক কিছু করতে শেখে। তারা খেলার ছলেই বিভিন্ন কায়দা কানুন রপ্ত করে ফেলে। তাছাড়া প্রতিটি শিশুর কাজের এবং শেখার ধরনই আলাদা। সেখানে শিশুর ইচ্ছেটার প্রতিই বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়। শিক্ষা লাভোর ক্ষেত্র সংকীর্ণ নয় অনেক বিস্তৃত। বিদ্যালয়ের পড়ালেখা ছাড়াও যে বিভিন্ন কাজ আছে সেগুলোকে অভিভাবকরা আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন মনে করলেও আসলে কিন্তু তা নয়। যেমন- বাগান করা, পিকনিক করা, নানাবিধ অনুষ্টানের আয়োজন করা, গণতান্ত্রিক জীবন যাপনে শিক্ষা, ছড়া-আবৃত্তি এবং গল্পে শিক্ষা, কর্মসংগীত, সাফাই কিংবা প্রার্থনায় শিক্ষা, চলতি খবর, সমবায় সমিতির মাধ্যমে শিক্ষা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণে শিক্ষা, দিনলিপির দ্বারা শিক্ষা, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত এবং খেলাধুলা এসব বিষয়ের মাধ্যমে যদি শিক্ষাটাকে কর্মমুখর করে তোলা হয় তবে সেই শিক্ষাটাকেই তারা কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগিতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বড়ই একঘেয়েমী হয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত মানুষরুপে গড়ে উঠবে। শিশুরা সঠিক মানুষ হবার জন্য কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। সকল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞানার্জন করা। কারিগরি শিক্ষার্জনের মাধ্যমেই তারা সঠিক জ্ঞানার্জন করতে পারে। শিক্ষার মূল কথা হচ্ছে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ঘটানো। তাদের দৈহিক বৃদ্ধি, মানসিক এবং আতœার উন্নতি সাধন করা,আবেগ অনুভূতির সঠিক প্রকাশের সুযোগটা বিদ্যালয়েই সৃষ্টি করে দিতে হবে। প্রযুক্তিগত ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি তাদেরকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ এটিই পারে তাদেরকে সৃজনশীল করতে। শিশুদের বিভিন্ন অপকর্মের হাত থেকে বাঁচাতে তাদের হাতে বিনোদনমূলক বই তুলে দিতে হবে। বই পাঠে তাদের আনন্দ আসবে। তাদের মানসিক পরিবর্তন ঘটবে, উন্নত ধ্যান ধারনার জন্ম তাদের মানসিক পরিবর্তন ঘটবে, উন্নত ধ্যান ধারনার জন্ম নিবে এবং তাদের আপন জগতকে চিনবে। তাদের অপরাধবোধ দূর হবে, অপচিন্তা দূর হবে। আর তখনই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। শিশু শিক্ষার প্রথম এবং শেষ কথা হচ্ছে আগ্রহ সৃষ্টি করা। আর তাই ভাল লাগা, মন্দ লাগার সাথে সাথেই তাদের রুচিশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার। কর্মমুখী শিক্ষার জন্য আনুষ্টানিকভাবেই সরকারী উদ্যেগ নিলে বাংলাদেশ একটি সুনামধন্য ও গুনান্বিত নাগরিক পাবে। শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটাতে হবে। ‘অ মড়ড়ফ বফঁপধঃরড়হ ষবধফং নড়ঃয ঃযবড়ৎু ধহফ ঢ়ৎধপঃরপব.’ কর্মমুখী শিক্ষা থাকলে শিক্ষার্থী তা তার প্রাত্যাহিক জীবনে কাজে লাগাতে পারে। ব্যবহারিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার যথার্থ রুপান্তর ঘটানো যেতে পারে এবং জনসাধারণকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর করা যেতে পারে। এই দৃষ্টিকোন থেকে কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটা কথা মনে রাখতে হবে, ‘ইবঃঃবৎ ংশরষষং, নবঃঃবৎ লড়নং, নবঃঃবৎ ষরাবং. ’

সহকারী শিক্ষক
কধুরখীল বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
বোয়ালখালী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট