চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফরম ফিলাপ শেষ এবার নাও সেরা প্রস্তুতি!

মো. সেলিমুজ্জমান মজুমদার

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

প্রিয় পরীক্ষার্থী,
তোমাদের শুভেচ্ছা জানাই। অনেক সাধনা ও চাপ সহ্য করে অবশেষে তোমরা এসএসসি এবং এইচএসসি’র জন্য ফরম ফিলাপ শেষ করেছো। ইতোমধ্যে এসএসসি পরীক্ষা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। এ ফরম ফিলাপের মধ্য দিয়ে দশ বোর্ডের ছাত্র ছাত্রীরা ফাইনাল পরীক্ষার জন্য নিজেদের যোগ্য হিসেবে, প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছো, এজন্য তোমাদের আবারও ধন্যবাদ জানাই।
কথায় আছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। যেহেতু, সামনে তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষা সেহেতু, সে ফাইনাল পরীক্ষার ওপরই নির্ভর করছে ভাল-মন্দ উভয়ই। সেই একাদশ শ্রেণিতে অনেক দুর্ভোগ ও অঢেল অর্থকড়ি খরচ করে ভর্তি এবং সম্প্রতি বহু চাপ সহ্য করা ফরম ফিলাপও ফিকে যাবে যদি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ না হয়। এজন্য আগত ফাইনাল পরীক্ষার সব চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলা করার জন্য সেরা প্রস্তুতি নাও। আত্মবিশ^াসে এগিয়ে চল। তোমরা সফল হবেই,
ইন্সাআল্লাহ।
প্রিয় পরীক্ষার্থী,
যে কোন পরীক্ষার জন্য সেরা প্রস্তুতি দরকার। পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কথাটি আরো বেশি সত্য। তুমি কত চমৎকারভাবে লিখতে পার তা প্রকাশের চমৎকার ক্ষেত্র হল পরীক্ষার উত্তরপত্র। মনে রেখো, শ্রেণিকক্ষ সংসদ আর পরীক্ষার হল বিউটি পাল্লার তুল্য। এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও এইচএসসি পরীক্ষা সামনে। এ দুটি পরীক্ষাই পর পর অনুষ্ঠিত হবে। দুটি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ, ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রচনা করাসহ সব প্রস্তুতিই শিক্ষা বোর্ডগুলো ইতোমধ্যেই শেষ করেছে। তোমাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরাও তোমাদের সামনের পরীক্ষায় ভাল ফল অর্জন করার জন্য প্রাইভেট-কোচিং বিশেষ ক্লাস ইত্যাদি মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনাও তোমাদের প্রস্তুতি যাতে সুন্দর ও সেরা হয় সেজন্য ‘মেইজ ইজি’, ‘টার্চ এন্ড পাস’ ‘মডেল টেস্ট’-ইত্যাদি পরীক্ষাবান্ধব পুস্তক বাজারে ছেড়েছে। অনেক প্রকাশ
গরীব-মেধাবী পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিনামূল্যে সৌজন্য সংখ্যাও বিলিয়েছেন। আমাদের সম্মানিত অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ব্যাপারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন। বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকার সবাই তোমাদের নিয়ে সুনাগরিক ও দক্ষমানব শক্তি গড়ার স্বপ্নে বিভোর। সুতরাং আমাদের উচিত দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণে সেরা প্রস্তুতিটাই গ্রহণ করা। তাই নয় কী?
পরীক্ষার প্রস্তুতি কোন জোর-জবর দখল নয়, চাপিয়ে দেয়ার বিষয়ও নয় বরং এটা একটা পবিত্র পণ। এ প্রতিজ্ঞা পূরণে চাই ধারাবাহিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। চলো, আমরা পরীক্ষায় সফলতা অর্জনের জন্য ধারাবাহিক স্তরগুলো জেনে নিইÑ
১) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সব পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ ও বইয়ের আগা-গোঁড়া লাইন বাই লাইন পড়া।
২) ১টি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস সংগ্রহ করত প্রশ্নপদ্ধতি ও মান এবং সময় বণ্টনের ওপর পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন।
৩) পরীক্ষায় কতটি সৃজনশীল ও বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর করতে হবে এবং সেগুলোর মান ও সময় কত? সে বিষয়ে আগে থেকেই বিস্তারিত ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার।
৪) পরীক্ষার জন্য ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার রুটিন ছাড়াও নিজস্ব দৈনিক রুটিন দরকার, যা নিজ থেকে রচিত অথবা প্রকাশনা থেকে
সরবরাহকৃত রুটিন অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রুটিন অনুসরণ করেই নিয়মিত চর্চা করতে হবে। এতে সফলতা আসবেই।
৫) বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নের ধারণা সম্পর্কে জানতে বিগত বছরের সৃজনশীল রচনামূলক ও সৃজনশীল বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো অনুসরণ কর। এতে করে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে তোমার একটা ধারণার সৃষ্টি হবে।
৬) পরীক্ষায় অধিকতর ভালো করার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষক অথবা তোমার প্রিয় যেকোন শিক্ষকের সাহায্য নাও। একটি অধ্যায় থেকে কী কী জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক, উচ্চতর দক্ষতা মূলক প্রশ্ন আসতে পারে তা পূর্ববর্তী পরীক্ষার বোর্ড প্রশ্নপত্রের আলোকে তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং উত্তর নিজে থেকেই লেখার অভ্যাস করতে হবে। জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর হুবহু মুখস্থ করা চাই। বাকী প্রশ্নোত্তরে মুখস্থ নির্ভরতা পরিহার করতে হবে।
অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় পরীক্ষায় কীভাবে প্রশ্ন আসতে পারে তার নমুনা হিসেবে মাস্টার ট্রেইনার ও বোর্ড পরীক্ষক প্যানেল শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্ন ও লোড করা যায়। পাঠ্য বইয়ের আলোকে নির্ভুল উত্তর শিক্ষক, কোচিং প্রাইভেট টিউটর, ইন্টারনেট থেকে ইচ্ছে মত লুফে নাও। সময়কে কাজে লাগাও। আরো একটি সুসংবাদ হল, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনেক প্রকাশনা
ঙহষরহব ও গড়নরষব ঊীধস এর ব্যবস্থা রেখেছেন। এ জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার সাথে সাথেই তোমরা পেয়ে যাবে ঠিক ও ভুল উত্তর সম্পর্কিত সব তথ্যসহ প্রাপ্ত নম্বর।
ফরম ফিলাপ থেকে শুরু করে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার আগ পর্যন্ত সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে স্বাস্থ্য সুস্থ থাকা চাই। পরিমিত খাবার, নিয়মিত ঘুম ও বিনোদন দরকার। অকারণে সময় নষ্ট করা যাবে না। পরীক্ষা নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠাজনিত কারণে শরীর দুর্বল হয়ে ঘুমঘুম ক্লান্তিভাব, দেখা দিতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। কলেজ জীবনে মোবাইল, মানি, মিউজিক, মাদক,
টিভি-সিনেমা, কিশোর প্রেম, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরে বেড়ানো, অবাধ আড্ডা, অভিভাবকদের আদেশ-উপদেশ অসহ্য বোধ, প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি এসবে অমৃত ও অফুরান তৃপ্তি লাগে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, পরীক্ষা খারাপ হলে, প্রত্যাশা মত ফল করতে না পারলে সব চাওয়া মরে যাবে। জীবনের রঙিন স্বপ্ন ফিকে যাবে তোমরা
মা-বাবার আদরের ধন। দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তোমাদের পরীক্ষার দিনগুলোতে মা-বাবা গভীর উৎকণ্ঠায় থাকেন। অনেক মা-বাবা এজন্যে নফল নামাজ, রোজাসহ ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। স্বীয় ধর্মানুযায়ী মসজিদ-মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করেন, ধর্মীয় গুরুর নিকট নিয়ে যান। মা-বাবা সর্বস্ব ত্যাগ করেন। স্বর্ণ-অলঙ্কার, গরু ছাগল বেচে দেন। ধার-কর্জ করে সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালান। অনেক পরীক্ষা করেছো। অনেকে শহরে মেচ কোয়াটারে থেকে বহু কষ্টে লেখাপড়া করছো। কারো কারো মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন বাবা ঠেলা রিকশা চালান ফরম পূরণে কিছু টাকা মওকুপ করার জন্য কত আবেদন-নিবেদন করেছো। কেউ কেউ টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে আবার নতুন করে পরীক্ষা দিয়েছো, কর্তৃপক্ষকে মুচলেখা দিয়ে পাস করার শর্তে অতিরিক্ত টাকাও জমা রেখেছো।
মা-বাবা এবং তোমাদের নিজেদের এ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের কথা মনে রেখে, তোমাদের পরীক্ষায় সফল হওয়ার যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। মা-বাবা, শিক্ষক ও দেশবাসীর সুন্দর স্বপ্ন তোমাদের পূরণ করতেই হবে। দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলো তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। তাই বলি, সেই-ই বুদ্ধিমান ও সুবিবেচক যে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট থাকে। নিজের স্বপ্ন সফল করার স্বপ্নে মত্ত থাকে। আবারও বলি, তোমরা বিশ^াসে এগিয়ে চল। সফলতা আসবেই।
প্রিয় পাঠকদের বলি, মা-বাবার সান্নিধ্য ছাড়াই বড় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। এমন পরীক্ষার্থী আছে যাঁদের মা-বাবা দুজনই মারা গেছেন। বহু পরীক্ষার্থীর মা অথবা বাবাকে উপার্জনের তাগিদে পরিবার ছেড়ে দেশের বাইরে থাকতে হয়। স্তরে স্তরে কেনা পাঠ্যবই, সহায়ক বই, প্রাইভেট কোচিং ও প্রতিষ্ঠানের খরচ বহনে ন্যুব্জ পরীক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। তাঁদের লেখা পড়ায় সহায়তা করুন। কর্তৃপক্ষ আমাদের কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন এবং পরীক্ষার্থীরা সফল হবে, এ
কামনাই করি।

লেখক : শিক্ষাবিদ, শিক্ষা বিষয়ক কলামিস্ট

শেয়ার করুন