চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরেই বিবিধ দূষণে আক্রান্ত বাংলাদেশের নগর-মহানগন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দূষণের মাত্রা ছেড়ে গেছে। এখন নানা গবেষণা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে শব্দ ও বায়ুদূষণ বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের গত রবিবারের রিপোর্ট বলছে, দিনের বেশিরভাগ সময় বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। প্রতিষ্ঠানটি ২৪ ঘণ্টা ধরে বিশ্বের ৯৫টি বড় শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রামসহ ঢাকার বাইরের অনেক শহরও বায়ুদূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ১২টি বড় শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণে পাওয়া চিত্রও বেশ উদ্বেগজনক। এই সংস্থাটি বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের তথ্য একদিন পর পর দেয়। শনিবারের রিপোর্ট বলছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, নরসিংদী শহরের বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। অথচ বিগত বছরগুলোতে বায়ুর মানের এ রকম অবনতিশীল চিত্র দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষীয় অবহেলাসহ নানা কারণে শহরের বায়ুর মান খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। এটি চরম উদ্বেগকর। তবে দূষণ রোধে হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি আশা আশার খবর।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গত বছরের ২১ জানুয়ারি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। বায়ুদূষণ রোধে সুপারিশসংবলিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বায়ুদূষণ রোধে মোট ৯ দফা নির্দেশনা দেন আদালত। হাইকোর্টের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেসব পরিবহনের ইকোনমিক লাইফের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব পরিবহন চলাচলে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলমান টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ এলাকায় বালু, সিমেন্ট, মাটিসহ নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ যাতে আইন ও দরপত্রের শর্তানুযায়ী নিশ্চিত করা হয় তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের যেসব ধুলাবালিপ্রবণ এলাকায় এখনো পানি ছিটানো হয়নি, সেসব এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটাতেও বলা হয়েছে। যদিও ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ নিয়ে আদালতের এই নির্দেশনা, তবে আমরা আশা করবো চট্টগ্রামসহ যেসব মহানগরীতে বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, সেসব এলাকায়ও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ থাকবে সরকারের।

উল্লেখ্য, বাযু ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। যদিও পানি ছাড়া আমরা বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারি। কিন্তু বায়ু ছাড়া দিন, ঘণ্টা দূরে থাক; আমরা সর্বোচ্চ তিন মিনিট অবধি বেঁচে থাকতে পারি। আর বিশুদ্ধ বায়ুর অভাব জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। মানুষ আক্রান্ত হয় নানা প্রাণঘাতী রোগ-ব্যাধিতে। যার কারণে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নির্মল বাযুসেবনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বায়ুদূষণের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে আমাদের এই বাংলাদেশ। ঢাকার পর এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রামও মারাত্মক বায়ুদূষণের শিকার। ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের যে পাঁচ দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। আর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুদূষণ এমন একটি মারাত্মক প্রভাবক, যার জন্য ২৪ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষের হার্টের অসুখ, ২৫ শতাংশ স্টোক, ৪৩ শতাংশ পাল্মনারি রোগ এবং ২৯ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার হয়ে থাকে। বায়ুদূষণের অর্থনৈতিক প্রভাবও কম নয়। প্রতি বছর বিশ্বঅর্থনীতির ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় বায়ুদূষণের কারণে। বায়ুদূষণের শিকার শীর্ষ পাঁচ দেশেই রয়েছে বাংলাদেশ। তাহলে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ কত হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা তথ্য বলছে, গত এক দশকে বৈশ্বিকভাবে পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ ৪০ ধাপ পিছিয়েছে। নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। অপরিকল্পিত ও দীর্ঘসূত্রতার উন্নয়নসহ নানা কারণে দেশের দুটি প্রধান শহর আজ মারাত্মক বায়ুদূষণের শিকার। কিন্তু দূষণ রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করি, দেশ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় বায়ুদূষণ প্রতিরোধে এখনই সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট