চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলাদেশী নাগরিক হত্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বেগ থামাতেই হবে সীমান্তহত্যা

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ নানা উদ্যোগের পরও সীমান্তে কমছে না একতরফা হত্যা ও নির্যাতন। সীমান্তে হত্যাকা- শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন করছে না ভারত। উপরন্তু সীমান্তে হত্যাকা-ের সংখ্যা ও মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, প্রায়ই চলছে সীমান্তহত্যা ও পাশবিক নির্যাতন। ঢাকা ও নয়াদিল্লীর মধ্যে বিদ্যমান সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক সত্ত্বেও সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রবিবার তাঁর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংকালে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সীমান্তে কোন হত্যাকা- না ঘটানোই আমাদের নীতি এবং ভারত সরকারও এ বিষয়ে সম্মত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে হত্যাকা- ঘটছে। আমরা এই সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন।’ তিনি ‘সীমান্তে জিরো হত্যাকা-’ নিশ্চিতে ভারতের অঙ্গীকারকে মনে করিয়ে দিতে বার্তা পাঠাবে বলেও জানিয়েছেন।

বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘লিথাল উইপন’ ব্যাবহার না করার ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সীমান্তে বাংলাদেশিদের দেখামাত্র গুলি চালাচ্ছে বিএসএফ। গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতেই সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলী করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)। এসময় আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে গতবছর সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ২৪ জন। গত তিন বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যা হয়েছে গত বছর। গত ২৫-৩০ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্তসম্মেলনেও সীমান্তহত্যা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিএসএফ। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’র (মাসুম) মতে, আগে বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানোর অজুহাত দিয়ে লাশ ফেরত দিতো। এখন গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। ফেরতও দেয় না। বন্ধুপ্রতীম ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক বলতে হবে।

উল্লেখ্য, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালানকে সীমান্ত হত্যাকা-ের একটি বড় কারণ হিসাবে দেখা হয়। এটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে, সে জন্য হত্যাকা- মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশেরই আইন অনুযায়ী, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করার কথা রয়েছে। প্রচলিত আইন ও দ- তো রয়েছে। গ্রেপ্তার করে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। তা না করে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এটি কোনো মতেই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেই আমরা মনে করি। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধেরই সামিল। কারণ যাই থাক না কেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম বন্ধুরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী কোনো বন্ধুরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এমন পাশবিক হত্যাকা- চালাতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রসঙ্গত, বিএসএফের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে সীমান্তবর্তী ভারতীয়দেরও অনেকেই বাংলাদেশে ঢুকে ধানসহ নানা ধরনের ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেই হত্যাকা-ও ঘটিয়েছে। কিন্তু বিজিবি তাদের গুলি করেনি। আটক করে বিএসএফ’র কাছে সোপর্দ করেছে। বিপরীতে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে কিংবা অপরাধকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি কখনো। উল্টো নানা অজুহাতে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে চলেছে। এটি দুঃখজনক।

বর্তমান সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও অনন্য উচ্চতায় সমাসীন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সীমান্তে বিএসএফের আচরণে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। আমরা সীমান্তহত্যা বন্ধে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দেখতে চাই। একই সঙ্গে সীমান্তহত্যা ও নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে অনুপুঙ্খ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও যৌক্তিক পদক্ষেপ চাই। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। সীমান্ত রক্তাক্ত রেখে আর যাই হোক, সুসম্পর্ক টেকসই করা যায় না, এ বিষয়টি ভারতকে অনুধাবন করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট